৬ নভেম্বর ২০২৫

মারা গেছে অসুস্থ সিংহী টুম্পাও

কক্সবাজার প্রতিনিধি »

কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের অসুস্থ সিংহী টুম্পা মারা গেছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের দিন (২১ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে চিকিৎসাধীন ১৫ বছর বয়সী সিংহী ‌‘টুম্পা’ মৃত্যুবরণ করেছে বলে জানিয়েছেন পার্কের তত্বাবধায়ক মো. মাজহারুল ইসলাম।

গত দুই মাস যাবত টুম্পাকে ৫ সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল। বার্ধক্য জনিত রোগের কারণে সিংহী টুম্পার মৃত্যু হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে চকরিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (নম্বর ১০৪৫/২০২৩) করা হয়েছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, চকরিয়া ও সাফারি পার্কে কর্মরত ভেটেনারি অফিসারের তত্ত্বাবধানে মৃত সিংহীটির ময়নাতদন্ত কার্যক্রম চলে। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পাওয়া গেলে টুম্পার মৃত্যু নিয়ে সবিশেষ জানা যাবে।

এদিকে, গত একবছরে ডুলাহাজারা সাফারী পার্কে বন্দি প্রাণী মৃত্যুর হার বেড়ছে। বার্ধক্যজনিত ও সাধারণ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে গত একবছরে মারা গেছে হাতি-সিংহসহ ছয় প্রাণী। নানা উন্নয়নের পরও সীমানা প্রাচীরের ২১টি পয়েন্ট এখনো অরক্ষিত। সেসব স্থান দিয়ে অনায়াসে পার্কে ঢুকছে বন্য হাতির পাল। এরা পার্কে গাছগাছালি ও স্থাপনা নষ্ট করছে। অরক্ষিত স্থান দিয়ে বের হওয়া হরিণ নিখোঁজ রয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

পার্ক সূত্র মতে, গত বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে এক বছরে চারটি সিংহ ও দুটি হাতি মারা যায় সাফারী পার্কে। তন্মধ্যে, ২১ ফেব্রুয়ারি মারা গেছে ১৫ বছর বয়সী সিংহী ‘টুম্পা’। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর বার্ধক্য ও পিত্রথলিতে আড়াই কেজি ওজনের গলব্লাডার (পাথর) জমে মারা যায় ৮৬ বছর বয়সী ‘রঙ্গমালা’ নামক হাতিটি। একই বছর ২৮ নভেম্বর ৩২ বছর বয়সী হাতি ‘সৈকত বাহাদুর’ নামক হাতি মারা যায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে। বার্ধক্যজনিত রোগে ভোগে গতবছরের ২৩ ফেব্রুয়ারী মারা যায় ২২ বছর বয়সী সিংহ ‘সোহেল’। গত বছরের ২২ এপ্রিল মারা যায় ১০ বছর ৮ মাস বয়সী সিংহী ‘নদী’। সঙ্গী সম্রাটের সাথে পার্কে মিলনের সময় আহত হয়ে ‘ফিলাইনলিউকিমিয়া’ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় নদী। চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারী মারা যায় ১৬ বছর বয়সী সিংহ ‘রাসেল’। এনাপ্লাজমা ও বিউবমিয়া স্পিসিসে আক্রান্ত হয়ে রাসেল মারা যায় বলে উল্লেখ করেন প্রাণী চিকিৎসক টিম। একই রোগে আজ (২১ ফেব্রুয়ারি) মারা গেছে সিংহ রাসেলের বোন ১৫ বছর বয়সী সিংহী ‘টুম্পা’।

সাফারি পার্কের তত্ত্বাবধায়ক মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, প্রায় ৯০০ হেক্টর বিশিষ্ট সাফারী পার্কের বাউন্ডারি ওয়ালের পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব অংশে ২১টি পয়েন্ট অরক্ষিত। ওই স্থান দিয়ে পার্কের হরিণ নিকটস্থ জঙ্গলে বের হলে শিকারীর খপ্পরে পড়তে পারে। কিছু হরিণ নিখোঁজ থাকতে পারে। পার্কে হরিণের সংখ্যা অনেক। গণনার ব্যবস্থা থাকলে কি পরিমাণ নিখোজ তা সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ করা যেত।

তত্বাবধায়ক আরও বলেন, বর্তমানে ১-৪৫ বছর বয়সী ৪টি হাতি পার্কে রয়েছে। টুম্পা মারা যাবার পর ২টি সিংহী ও ১টি সিংহ আছে এখন। অন্যান্য প্রজাতির প্রাণী গুলো রয়েছে সুস্থ-সবল। নিয়মিত দেখভালসহ পর্যাপ্ত খাদ্য দেয়া হচ্ছে পশু পাখিগুলোকে।

সিংহ ও হাতি মৃত্যুর বিষয়ে তিনি বলেন, প্রতিটি প্রাণী অসুস্থ হলে সুস্থ করে তুলতে প্রাণী বিশেষজ্ঞদের নিয়ে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়। যেগুলো মারা গেছে তাদের সুস্থ করতে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কাজ করেছে মেডিকেল টিম। এরপরও বার্ধক্য এবং জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে ৬টি প্রাণী মারা যায়। প্রাণান্তকর চেষ্টা করেও টুম্পাকে সারিয়ে তুলতে পারেননি চিকিৎসক টিম।

পার্ক তত্বাবধায়ক মাজহারুল ইসলামের দাবি পার্কের যে অংশ দিয়ে বন্য হাতি প্রবেশ হয় তা পার্কের পূর্ব পাশে লামা উপজেলা অংশে। দর্শনার্থী থাকে পার্কের পশ্চিমাংশে। এপাশে বন্য হাতি আসার সুযোগ নেই। তাই দর্শনার্থীরা নিশ্চিন্তে পার্কের প্রকৃতি ও প্রাণী দর্শন করতে পারেন।

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ