ksrm-ads

১৬ মার্চ ২০২৫

ksrm-ads

কক্সবাজার-ঢাকা বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচল শুরু

পর্যটন নগরী কক্সবাজার ও রাজধানী ঢাকার মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল আজ থেকে শুরু হচ্ছে। আজ শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টায় কক্সবাজার থেকে যাত্রী নিয়ে চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকার পথে যাত্রা করবে স্বপ্নের ট্রেন। এজন্য পূর্বাঞ্চলীয় রেলবিভাগের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

কক্সবাজারের সাথে ট্রেন যোগাযোগ চালুর লক্ষ্যে কক্সবাজার শহরের ঝিলংজায় ঝিনুকের আদলে তৈরি করা হয়েছে এশিয়ার সর্ব বৃহৎ আইকনিক রেল স্টেশন। আজ থেকে হাজারো যাত্রীর পদভারে মুখরিত হয়ে উঠবে দৃষ্টি নন্দন এই স্টেশন।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ নভেম্বর কক্সবাজারে নব নির্মিত আইকনিক স্টেশনে এই রেলপথ প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর ট্রেনের সময়সূচি নির্ধারণসহ প্রয়োজনীয় সব কাজ শেষ করেছে রেল বিভাগ।

এই পথে ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ায় পর্যটকসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ ও উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। কক্সবাজারে পর্যটন শিল্পের জন্য তৈরি হয়েছে নতুন সম্ভাবনা। বিপুল সংখ্যক পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণে আসতে ইতোমধ্যে হোটেল বুকিং দিয়েছে। আগামী ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই রুটে ট্রেনের সকল টিকেট অগ্রিম বিক্রি হয়ে গেছে।

কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্টেশন মাস্টার গোলাম রাব্বানী বলেছেন, ‘বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচলের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আমরা এখন সেই কাঙ্ক্ষিত সময়ের অপেক্ষায় রয়েছি। আগামীকাল (আজ শুক্রবার) বেলা সাড়ে ১২টায় কক্সবাজার স্টেশন থেকে ৭৮০ জন যাত্রী নিয়ে প্রথম ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। অপরদিকে রাত সাড়ে ১০ টায় সম সংখ্যক যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে আরেকটি ট্রেন কক্সবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে।’

স্টেশন মাস্টার জানান, এই রুটে আপাতত দু’টি ট্রেন চলাচল করবে। কক্সবাজার থেকে ট্রেন ছাড়বে বেলা সাড়ে ১২ টায়। চট্টগ্রাম হয়ে এটি ঢাকায় পৌঁছাবে রাত ৯টা ১০ মিনিটে। অন্যদিকে ঢাকা থেকে ট্রেন ছাড়বে রাত সাড়ে ১০ টায়। এটি কক্সবাজার পৌঁছাবে পরদিন সকাল ৭টা ২০ মিনিটে।

তিনি জানান, ট্রেনে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এসি চেয়ার আসন ৩৩০টি এবং নন এসি শোভন শ্রেণিতে আসন সংখ্যা ৪৫০। চট্টগ্রামের যাত্রীদের জন্য নির্ধারিত থাকবে দু’টি কোচ। এই রুটে এসি স্নিগ্ধা শ্রেণী ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩২৫ টাকা। নন এসি শোভন শ্রেণীর ভাড়া ৬৯৫ টাকা। কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের ভাড়া এসি ৪৭০ টাকা এবং নন এসি ২৫০ টাকা।

মনোমুগ্ধকর আইকনিক রেল স্টেশন
কক্সবাজার শহরের ঝিলংজায় ঝিনুকের আদলে তৈরি আইকনিক রেল স্টেশন এখন দর্শনার্থীদের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় স্থাপনায় পরিণত হয়েছে। পর্যটকসহ হাজার হাজার লোক প্রতিদিন এই স্টেশনটি দেখার জন্য ভিড় করছে। কক্সবাজার শহর থেকে তিন কিলোমিটার পূর্বে ঝিলংজা ইউনিয়নের হাজিপাড়া এলাকায় ২৯ একর জমির ওপর নির্মিত এই স্টেশন ভবনটির আয়তন এক লাখ ৮২ হাজার বর্গফুট। ছয় তলা এই ভবনে রয়েছে নানা সুযোগ সুবিধা।

রেল মন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘আমাদের সকলের জন্য গর্বের বিষয় কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশন ভবন। এরকম অনন্য স্থাপনা অন্য কোথাও নেই। এটি এশিয়ার প্রথম শতভাগ পর্যটনবান্ধব কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ছয়তলা স্টেশন। ঝিনুকের আদলে তৈরি স্টেশনে আবাসিক হোটেলের পাশাপাশি ক্যান্টিন, লকার, গাড়ি পার্কিং ইত্যাদি ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পর্যটকরা স্টেশনের লকারে লাগেজ রেখে সারাদিন সমুদ্র সৈকতে বা দর্শনীয় স্থানে ঘুরতে পারবেন। স্টেশনে রয়েছে মসজিদ, শিশু যত্ন কেন্দ্র ও চলন্ত সিঁড়ি। এখানে রয়েছে এটিএম বুথ, পোস্ট অফিস, ট্যুরিস্ট ইনফরমেশন বুথ সহ নানা সেবা কেন্দ্র।’

মন্ত্রী বলেন, ‘২১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত আইকনিক এই স্টেশনটি নির্মাণে চীন, বেলজিয়াম, ইংল্যান্ড, ইতালিসহ বিশ্বের বিভিন্ন আধুনিক স্টেশনের সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। পুরো প্রকল্পটিতে ১১০ জন বিদেশিসহ মোট ২৫০ জন প্রকৌশলী এবং ছয় শতাধিক লোক কাজ করেছে। চার বছরের শ্রমে অনন্য সুন্দর রেলস্টেশন ভবনটির কাজ শেষ হয়েছে।’

বদলে যাবে কক্সবাজার
কক্সবাজার হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম বলেন, ‘ট্রেনে চড়ে হাজারো পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণে আসছে। স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। ট্রেন যোগাযোগের কারণে বদলে যাবে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প। অনেক লোকের কর্মসংস্থান হবে, এটা অনেক আনন্দের।’

তিনি বলেন, ‘ট্রেনে চড়ে প্রথম দিনে যে সকল যাত্রী কক্সবাজার আসবে, স্টেশনে তাদেরকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানাবে হোটেল মোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতি।’ তিনি জানান, রেল যোগাযোগ চালু হওয়ায় পর্যটকদের জন্য কক্সবাজারের সকল হোটেল মোটেলে বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

কক্সবাজার পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি অ্যাডভোকেট আয়াছুর রহমান বলেন, ‘স্বপ্নের রেল এখন পর্যটন শহর কক্সবাজারে। এই রেল পথ বাংলাদেশের উন্নয়নে যুগান্তকারী ঘটনা। বৃটিশ, পাকিস্তানের সুদীর্ঘ সময় এবং স্বাধীন বাংলাদেশের অর্ধশত বছরে যা হয়নি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার তা করে দেখালেন।’

তিনি বলেন, ‘এই রেল পথ কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে পরিপূর্ণতা দেবে। বিদেশি পর্যটক আনতে সহায়ক হবে। শুধু শীতকালে নয়, বর্ষা সহ সারা মৌসুম পর্যটকরা কক্সবাজার ভ্রমণে উৎসাহিত হবে।’

কক্সবাজার শিল্প ও বাণিজ্য সমিতির পরিচালক মোস্তাক আহমদ বলেন, ‘সহজ রেল যোগাযোগের কারণে কক্সবাজার এলাকায় উৎপাদিত পণ্য মাছ, শুটকি, লবণ, পান, সবজি সহ নানা পণ্য পরিবহণ ও বিদেশে রপ্তানির সুযোগ বাড়বে। কক্সবাজার সহ দেশের অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন আসবে।
কক্সবাজার-রামু আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরোয়ার কমল বলেন, রেল যোগাযোগ চালু হওয়ায় কক্সবাজারে পর্যটকদের উপস্থিতি বৃদ্ধির পাশাপাশি স্বল্প সময়ে ও কম খরচে কৃষিপণ্য, মাছ, লবণ পরিবহণ করা যাবে। এতে কক্সবাজারের পর্যটন সহ সামগ্রিক অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।’

তিনি বলেন, ‘এই রেল পথ মিয়ানমার, চীনসহ এই অঞ্চলের সাথে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ তৈরি করবে। আন্তর্জাতিক পরিসরে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। কক্সবাজার এলাকায় ব্যাপক হারে বিনিয়োগ হবে। কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।’

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জিএম মো. নাজমুল ইসলাম জানিয়েছেন, কক্সবাজারে ট্রেন চলাচল ইতোমধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। সকল টিকেট অনলাইনে অগ্রিম বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিবছর প্রায় ৬০ লাখ পর্যটক কক্সবাজারে আসেন। তাঁদের বেশির ভাগই যাতায়াত করেন বাসে। অনেকে বিমানে যাতায়াত করেন। এখন বেশির ভাগ পর্যটক ট্রেনে ভ্রমণ পছন্দ করছেন।’

চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার রেল পথ
কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মো. সুবক্তগীন জানান, ২০১৮ সালের জুলাইয়ে দোহাজারি থেকে কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণে মেগা প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এই মেগা প্রকল্পে দোহাজারি থেকে কক্সবাজার ১০২ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর অর্থায়ন করেছে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বাংলাদেশ সরকার।

চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার রেল পথ ১৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ। এর মধ্যে চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে দোহাজরি পর্যন্ত ৪৮ কিলোমিটার পথ বৃটিশ আমলে তৈরি। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০২ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি হাতে নেয় বর্তমান সরকার। এটি প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার বিবেচনায় গৃহীত একটি মেগা প্রকল্প। এই প্রকল্পের আওতায় সংস্কার করা হয়েছে শতবর্ষী কালুরঘাট সেতু।

 

 

 

 

ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণ বছর হতে চলেছে ২০২৩: জাতিসংঘ মহাসচিব

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ফেলে আসা মাসগুলোর উষ্ণতার পরিসংখ্যান দেখে ২০২৩ সালই যে আমাদের এই পৃথিবীতে সবচেয়ে উষ্ণ বছর হতে চলেছে তা আগেই একরকম নিশ্চিত করেছিলেন বিজ্ঞানীরা‌। এবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে জলবায়ু সম্মেলন কপ২৮ উদ্বোধন করে সেকথাই আরেক দফায় নিশ্চিত করলেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।

সম্মেলনের শুরুতেই তিনি বললেন, ‘মানবতার ইতিহাসে ২০২৩ সালই হতে চলেছে এখন পর্যন্ত রেকর্ড করা সবচেয়ে ঊষ্ণ বছর। বিশ্ব নেতাদেরকে জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে কাজ করার জন্য মিনতি করে গুতেরেস বলেন, “আমরা জলবায়ু ভেঙে পড়ার বাস্তব চিত্র চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি।’

তিনি জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানোর লক্ষ্যমাত্রা পূরণে দেওয়া সব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানান। ২০২৩ সাল ইতিহাসের সবচেয়ে ঊষ্ন বছর হতে চলার রেকর্ড ‘বিশ্ব নেতাদের শিরদাঁড়ায় কাঁপন ধরিয়ে দেওয়া উচিত’ বলে মন্তব্য করেন গুতেরেস।

২০২৩ সাল বিশ্বের উষ্ণতার সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে-বিশ্ব আবহাওয়া সংগঠন এমনটি একরকম নিশ্চিত বলে প্রতিবেদন দেওয়ার পর জাতিসংঘ মহাসচিব কপ২৮ সম্মেলনে ওই মন্তব্য করেন।

অক্টোবর মাসের গড় উষ্ণতা দেখার পরই বিজ্ঞানীরা ২০২৩ ঊষ্ণতম বছর হতে চলেছে বলে নিশ্চিত হন। শিল্পবিপ্লবের আগে অর্থাৎ, ১৮৫০-১৯০০ সালের মধ্যে অক্টোবরের গড় উষ্ণতা যা ছিল, তার চেয়ে গত মাসে উষ্ণতা ০ দশমিক ৪ ডিগ্রি বেশি ছিল। অনেকের কাছে এই মাত্রা নগণ্য মনে হলেও জলবায়ু বিজ্ঞান তা মনে করছে না।

আর কেবল অক্টোবর নয়। একইভাবে বিশ্বের গড় উষ্ণতা বেড়েছিল গত সেপ্টেম্বরেও। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের উষ্ণতা রীতিমতো চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল বিজ্ঞানীদের কাছে। ইউরোপভিত্তিক জলবায়ুবিষয়ক পর্যবেক্ষক সংস্থা কোপারনিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিসের এক প্রতিবেদনে ২০২৩ সাল ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণতম বছর হতে চলার পূর্বাভাস দেওয়া হয় এমাসের শুরুতেই।

বিশ্বে ১৯৪০ সাল থেকে যে পরিমাণ গড় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, তার তুলনায় বিশ্বে গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত গড় তাপমাত্রা সর্বোচ্চ।

জাতিসংঘের আবহওয়া সংগঠনের প্রধান পেত্তারি তালাস জলবায়ু পরিস্থিতি নিয়ে সাময়িক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলেছেন, ‘গ্রিনহাউজ গ্যাসের মাত্রা রেকর্ড উচ্চে রয়েছে, বিশ্ব উষ্ণায়ন রেকর্ড উচ্চ পর্যায়ে আছে, সমুদ্রস্তরও রেকর্ড পরিমাণ উচ্চ। অ্যান্টার্কটিকার সমুদ্রে বরফের স্তরও সর্বনিম্ন পর্যায়ে।’

আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৪ সাল এল নিনো আবহাওয়া সিস্টেমের কারণে আরও ঊষ্ন হওয়ার আশঙ্কা আছে।

জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস তার বক্তেব্যে সমুদ্র স্তর বেড়ে যাওয়া এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা রেকর্ড উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানো এবং অ্যান্টার্কটিকার বরফ গলে নিম্নপর্যায়ে চলে আসার বিষয়টি উল্লেখ করে এ ব্যাপারে সতর্ক করে দেন।

এবছর বিশ্বব্যাপী বহু জায়গায় দাবানল, বন্যা, গরম বেড়ে যাওয়ার মতো নানা দুর্যোগ-দুর্বিপাকের কথাও সম্মেলনে সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।

বিতর্কিতভাবে এবার বিশ্বের শীর্ষ তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর অন্যতম আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে কপ২৮ সম্মেলন। আমিরাতের তেল খাতের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতান আল-জাবের সম্মেলনের দায়িত্বে আছেন।

বিশ্বের অন্য দুই বড় গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমনকারী দেশ চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতারা সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন না।

সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে আমিরাতের সুলতান আল-জাবের বলেছেন, এই সম্মেলন হতে হবে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের সম্মেলন। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ১০ হাজার কোটি ডলারের তহবিল সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও পূরণ হওয়া চাই।

গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমনের কারণে পৃথিবীর ঊষ্ন হচ্ছে। তাপমাত্রা এখনও বেড়েই যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, আগামী ৭ বছরের মধ্যে এই ঊষ্ণতা প্রায় অর্ধেকে নামাতে হবে। তাদের কথায়, বিশ্বের দেশগুলোর বর্তমান নীতিতে পৃথিবী বিপর্যয়কর পরিবর্তনের দিকেই যাচ্ছে। বেশিমাত্রায় দেখা যাচ্ছে তাপপ্রবাহ, বৃষ্টিপাত, সমুদ্রস্তর বৃদ্ধি।

 

 

 

দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন
জটিল সমীকরণে রাজনীতি, নতুন বিশ্ব ব্যবস্থায় নজর
আন্তর্জাতিক ডেস্ক

শেষ হয়ে যাচ্ছে ২০২৩। কিন্তু আফ্রিকা, ইসরায়েল-গাজা ও ইউক্রেনে যুদ্ধ পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। এই সংকট বিস্ফোরকের মতো। সামনে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তাই ২০২৪ সাল হতে পারে ১৯৪৫ সালের বিশ্ব যুদ্ধের পর নতুন ব্যবস্থা।

২০২০ সাল ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। ১৯ শতকের পর প্রথমবারের মতো বিশ্ব জিডিপিতে পশ্চিমের অংশ ৫০ শতাংশে নেমে যায়। ভারত ও তুরস্কের মতো দেশগুলো বিশ্বাস করে ১৯৪৫ সালের পরে তৈরি করা বিশ্বব্যাপী সংস্থাগুলো তাদের উদ্বেগের প্রতিফলন করে না। চীন ও রাশিয়া এই ব্যবস্থাকে উল্টে ফেলতে চায়।

যদিও আমেরিকার অর্থনীতি এখনো প্রসিদ্ধ। তবে একমেরুকরণও শেষ হয়ে গেছে। ইউরোপ ও জাপানের মতো মিত্রদের অর্থনীতি কমছে। মার্কিন বৈশ্বিক ভূমিকায়ও মধ্যবিত্তদের সমর্থন কমেছে। বিচ্ছিন্নতার ভাব রয়েছে রিপাবলিকানদের মধ্যে।

বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতি ও বাইডেন প্রশাসনের বৈদেশিক নীতি বাস্তবায়নে ২০২৩ সালে ব্যস্ত ছিল আমেরিকা। নির্দিষ্ট কিছু আদর্শ বাস্তবায়ন করা হয়। দেশটির প্রথম অগ্রাধিকার ছিল আফগানিস্তান ত্যাগ করা এবং প্রয়োজনীয় বিষয়কে এশিয়ায় স্থানান্তর করা। এর অন্যতম লক্ষ্য ছিল চীনকে ঠেকানো। এশিয়া প্যাসিফিক ও ইউরোপে মিত্ররা পুনরুজ্জীবিত হয়। প্রসারিত হয় ন্যাটো। যদিও ইউক্রেন এখনো ভাসমান অবস্থায় রয়েছে। জ্বালানি ও প্রযুক্তিখাতে প্রতিদ্বন্দ্বীদের ওপর আরোপ করা হয় নিষেধাজ্ঞা।

ভূরাজনীতি সহনীয় তবে রয়েছে অস্থিরতা। ১৯৯০ এর দশকে অনেক দেশ স্বাধীনতা, বাজার অর্থনীতি ও নিয়মভিত্তিক বিশ্বায়নের একটি স্ব-শক্তিশালী চক্রের আকাঙ্ক্ষা করেছিল। এখন পপুলিজম, হস্তক্ষেপবাদী অর্থনীতি ও লেনদেনের বিশ্বায়নে একটি অপ্রত্যাশিত চক্র রয়েছে। ফলে ২০২৪ সালের জন্য তিনটি হুমকি আসন্ন।

প্রথমত, দায়মুক্তির প্রবণতা বেড়েছে। গত ৩৬ মাসে আফ্রিকার অন্তত ছয়টি দেশে সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে। কোনো ধরনের চাপ ছাড়াই আর্মেনিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে জড়িত হয়েছে আজারবাইজান। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশেই ইরানের আর্শীবাদপুষ্টদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। এই ধারা ২০২৪ সালে আরও প্রসারিত হতে পারে।

দ্বিতীয় বিষয়টি হলো চীন, ইরান ও রাশিয়ার সমন্বিত উত্থান। যদিও পশ্চিমাদের মতো তাদের সাধারণ লক্ষ্য নেই। বিশ্ব অর্থনীতিতে অন্য দুই দেশের চেয়ে চীনের অংশগ্রহণ অনেক বেশি। তবে তাদের একটি কমন লক্ষ্য আছে সেটি হলো মার্কিন প্রভাব কমানো। রাশিয়া ও ইরান থেকে তেল কিনছে চীন। তারা কেউই হামাস কিংবা রাশিয়ার সমালোচনা করছে না। প্রযুক্তিখাতে তাদের সমন্বয় বাড়ছে। পশ্চিমা অর্থনীতিকে পাশ কাটাতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে চীন। এখন এটির অর্ধেকের মতো বাণিজ্য নিজস্ব মুদ্রায় হয়। রাশিয়ায় ড্রোন রপ্তানি করছে ইরান। পারমাণবিক ক্ষেত্রে সমন্বয় করছে ওয়াশিংটন ও বেইজিং। প্যাসিফিকে বাড়িয়েছে টহল। এই জোট কত দূর যেতে পারে তা দেখা যাবে ২০২৪ সালে।

চূড়ান্ত হুমকি হলো পশ্চিমা জোটের ভঙুরতা। ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ ঐক্যবদ্ধ, জনসমর্থনও রয়েছে, ১৯৪৫ সাল পরবর্তী বিশ্ব নীতিও অক্ষত। কিন্তু পশ্চিমাদের বাইরের অনেকেই এক্ষেত্রে অনৈক্য দেখিয়েছে। বর্তমানে একটি অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। ইউক্রেনে অর্থয়ানে খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই বিরোধিতা রয়েছে। বিশেষ করে রিপাবলিকানদের মধ্যে। তাছাড়া গাজায় ইসরায়েলি হামালার গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও রয়েছে অনৈক্য। এই বিষয়কে সামনে রেখে পশ্চিমাদের দ্বিচারিতা সামনে চলে এসেছে। অন্যান্য সংকটও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। প্রশ্ন উঠছে তাইওয়ানকে রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কী ইউরোপ যোগ দেবে?

২০২৪ সালের শেষের দিকে মার্কিন নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচনে যদি সত্যিকার অর্থে একজন বৈশ্বিক নেতা নির্বাচিত হয় তাহলে কিছুটা স্বস্তি ফিরতে পারে। স্থিতিশীলতা, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে দীর্ঘ লড়াইয়ের মুখোমুখি যুক্তরাষ্ট্র। করণীয় তালিকায় রয়েছে ইউরোপীয় পরিবর্ধন, ভারতের সঙ্গে সহযোগিতা গভীরতর করা, ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনিদের মধ্যে একটি দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান।

 

 

 

রুশ নারীদের কমপক্ষে ৮টি করে সন্তান নিতে বললেন পুতিন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক

নিজ দেশের নারীদের প্রত্যেককে ৮ কিংবা তারও বেশি সন্তান নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এছাড়া বড় পরিবারের প্রথাও ফিরিয়ে আনতে বলেছেন তিনি।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্ট বলছে, গত শতকের নব্বই দশক থেকেই রাশিয়ায় জনসংখ্যা তেমন একটা বাড়ছে না। তখন থেকেই দেশটিতে জন্মহার কম। তার মধ্যেই ইউক্রেন যুদ্ধে সামরিক-বেসামরিক মিলিয়ে প্রায় ৩ লাখ রুশ নাগরিক হতাহত হয়েছেন। এ কারণেই বেশি সন্তান নেওয়ার কথা বলছেন পুতিন।

মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) মস্কোতে আয়োজিত ওয়ার্ল্ড রাশিয়ান পিপলস কাউন্সিলে একটি ভিডিও বার্তায় পুতিন বলেন, আগামী দশকগুলোতে রাশিয়ার প্রধান উদ্দেশ্য হবে জনসংখ্যা বাড়ানো।

রুশ প্রথার কথা উল্লেখ করে পুতিন বলেন, পরিবার নিয়ে আমাদের দেশে যে প্রথা রয়েছে, তা অনেকেই মানেন। বিশেষ করে ৪-৫ কিংবা তার বেশি সন্তান নেওয়ার বিষয়টি। তবে আমাদের দাদা-দাদীরা ৭-৮টা করে সন্তান নিতেন। আসুন, সেই ধারা ফিরিয়ে আনি। অনেক সন্তান নেওয়া ও বড় পরিবার যেন আবার প্রথায় পরিণত হয়।

বিশেষ এই কনফারেন্স পরিচালনা করেন রাশিয়ার অর্থোডক্স চার্চের প্রধান প্যাট্রিয়ার্ক কিরিল। এতে রাশিয়ার বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তবে এই অনুষ্ঠানে ইউক্রেন যুদ্ধে হতাহতের ব্যাপারে সরাসরি কিছু বলেননি পুতিন।

সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্ট বলছে, সবাইকে ৮ সন্তান নিতে বললেও, এখন পর্যন্ত পুতিনের নিজের সন্তানই মাত্র দুজন। তবে এ দুজনের অগোচরেও কয়েকজন সন্তান থাকতে পারে তার।

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ