বাংলাধারা প্রতিবেদক »
দেশের বিভিন্নস্থানে শিক্ষকদের ওপর আক্রমণসহ দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক উসকানিদাতাদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি বলেছেন, শিক্ষার্থীরা ধর্মীয় শিক্ষা নেবে ধর্মের বই থেকে, বাংলা-ইংরেজি সাহিত্যের বইয়ে তাদের আমরা ধর্মশিক্ষা দেব না।
শুক্রবার (৮ জুলাই) বিকেলে নগরীর সিনেমা প্যালেস মোড়ে ও নন্দনকাননে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) উদ্যোগে পৃথকভাবে আয়োজিত উল্টো রথযাত্রার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের বিভিন্নস্থানে শিক্ষকদের ওপর পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক আক্রমণ হচ্ছে। সাভারে একজন শিক্ষককে খুন করা হয়েছে। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন এবং ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। এ ঘটনার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়েছে। নড়াইলে একজন শিক্ষককে অপমান করা হয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। ছাত্রত্ব বাতিল শুধু নয়, গ্রেফতারও করা হয়েছে। যে সাম্প্রদায়িক শক্তি এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে তাদের বাংলাদেশের জনগণ চিনে, দুর্গাপূজার সময়ও এরা সারাদেশে এমন ঘটনা ঘটাতে চেয়েছে। এই সাম্প্রদায়িক শক্তিকে আমরা দাঁতভাঙ্গা জবাব দেব।’
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে সম্ভাব্য বিশ্বমন্দাকে পুঁজি করে সাম্প্রদায়িক শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সামনে কঠিন সময় আসছে। সাম্প্রদায়িক অপশক্তি নানা ঘটনা-দুর্ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করছে। এরইমধ্যে তারা মাঠে নেমে গেছে। আমি জনগণকে বলব, ধর্ম নির্বিশেষে সবাই ঐক্যবদ্ধ হোন এদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে। আমরা সাম্প্রদায়িক অপশক্তির কবর দেব, তাদের শায়েস্তা করতে আমরা বিন্দুমাত্র পিছপা হব না। যারা দেশে দাঙ্গা বাঁধানোর উসকানি দিচ্ছে, সাম্প্রদায়িক উসকানি দিচ্ছে তাদের কাউকে ছাড় দেব না।’
‘যেসব রাজনৈতিক দল সাম্প্রদায়িক শক্তিকে উসকানি দিচ্ছে, তাদের নেতাদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করুন। যারা অতীতে আগুন সন্ত্রাস করেছে, পেট্রোল বোমা মেরেছে, যারা যুদ্ধাপরাধী জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ষড়যন্ত্র করছে তাদের তালিকা করুন। মৌলবাদীদের কিভাবে শায়েস্তা করতে হয় আমরা জানি। তাদের ষড়যন্ত্র আমরা সফল হতে দেব না। শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বী নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকলে ঐক্যবদ্ধ হোন। আমরা বিভক্ত থাকলে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’- বলেন নওফেল।
সাম্প্রদায়িক শক্তির গুজব ছড়ানোর তথ্য তুলে ধরে শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, ‘যারা মৌলবাদী-কট্টরপন্থী, ফ্যাসাদ-দাঙ্গায় বিশ্বাস করে, যারা দেশকে আফগানিস্তান বানাতে চায়, তারা বলছে আমরা নাকি ধর্মশিক্ষা তুলে দিচ্ছি। আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই- এই বাংলাদেশে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সব শিক্ষার্থী আত্মমর্যাদার সঙ্গে নিজ নিজ ধর্মীয় বিষয়ে পড়ালেখা করবে এবং তারা ব্যক্তিজীবনে সেটা পালন করবে। তবে আমরা বাংলা-ইংরেজি সাহিত্যের বইয়ে ধর্ম শেখাব না। ধর্ম বইতে ধর্ম শেখাব। আমরা শুধু মুখস্থ করা ধর্মশিক্ষা চাই না। আমরা চাই, শিক্ষার্থীরা ধর্ম ও নৈতিকতার শিক্ষা ব্যক্তিজীবনে অনুশীলন করবে। তারা গুরুজনদের সম্মান করবে, দুর্নীতি করবে না।’
‘কিন্তু সাম্প্রদায়িক-মৌলবাদী গোষ্ঠী চায় শুধু মুখস্থবিদ্যা দিয়ে তাদের ধর্মব্যবসা চালিয়ে যেতে। আমরা সেটি চাই না। আমরা প্রায়োগিক পদ্ধতিতে ধর্মশিক্ষা দিতে চাই। এই মুখস্থবিদ্যার ধর্মশিক্ষা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। যারা ধর্মশিক্ষা তুলে দেওয়া হচ্ছে বলে গুজব ছড়াচ্ছে, সেই মিথ্যাবাদীদের শাস্তি ফৌজদারি আইনেও হবে, পরকালেও হবে। যারা মিথ্যাবাদী-ফাসেক, ইসলাম ধর্মের অপব্যাখা যারা করে তাদের আমরা সবাই চিনি। তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তাদের ধ্বংস করতে আমরা পিছপা হব না।’- শিক্ষা উপমন্ত্রী।
বিএনপি প্রসঙ্গে উপমন্ত্রী নওফেল বলেন, ‘তারা জনসমর্থন হারিয়ে এখন কূটনীতিকদের বাসায় বাসায় গিয়ে ধরনা দিচ্ছে। তাদের সঙ্গে ডিনার করে দেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। এই ষড়যন্ত্র সফল হবে না। আগামী নির্বাচনে আবার শেখ হাসিনাই জিতে প্রধানমন্ত্রী হবেন। বিএনপি নির্বাচনে এলে আসুক, না এলে নাই। বিএনপি নির্বাচনে না এলেই বরং এদেশের জনগণ ভালো থাকবে। তাদের আমরা খোদা হাফেজ জানিয়ে দিয়েছি।’
সিনেমা প্যালেস মোড়ের অনুষ্ঠানে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের অধ্যক্ষ লীলারাজ গৌর দাস ব্রহ্মচারী, ইসকন বিভাগীয় কমিটির সম্পাদক চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী, রথযাত্রা উদযাপন কমিটির মিডিয়া সমন্বয়ক বিপ্লব পার্থ, স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাস ব্রহ্মচারী, কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহারের উপাধ্যক্ষ ড.জিনোবৌধি ভিক্ষু, ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন, হাসান মুরাদ বিপ্লব, পুলক খাস্তগীর, নিলু নাগ, রুমকী সেনগুপ্ত, সাবেক যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর বক্তব্য রাখেন।
এর আগে, গত ১ জুলাই রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। রথযাত্রার মতো উল্টো রথযাত্রার শোভাযাত্রায়ও নগরীতে মানুষের ঢল নামে। নগরীর মোড়ে মোড়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা উলুধ্বনি, শঙ্খধ্বনি দিয়ে এবং মঙ্গল প্রদীপ নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেন। শোভাযাত্রাটি সিনেমা প্যালেস থেকে শুরু হয়ে আন্দরকিল্লা, চেরাগী, জামালখান, আসকারদিঘীর পাড়, কাজির দেউড়ি, মেহেদিবাগ, গোলপাহাড় হয়ে প্রবর্তকে গিয়ে শেষ হয়। নন্দনকানন থেকে পৃথক শোভাযাত্রাও নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।