সায়ীদ আলমগীর, কক্সবাজার »
বাংলাদেশ সফরের দ্বিতীয় দিনে বেলজিয়ামের রানি মাথিলডে ৮ ঘণ্টার সফর শেষে কক্সবাজার ত্যাগ করেছেন। এসময় ৬ ঘণ্টা ক্যাম্পে অবস্থানকালে রোহিঙ্গাদের নিপীড়নের কাহিনি শুনেছেন রানি। পরিদর্শন শেষে মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টায় কক্সবাজার ত্যাগ করেন তিনি। এর আগে সকাল ১০টায় বেসরকারি উড়োজাহাজ নভোএয়ারের একটি ফ্লাইটে তিনি কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছান।
বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত ও বিদায় জানান কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান, পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলামসহ প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তা।
বিমানবন্দর হতে সড়ক পথে রওয়ানা দিয়ে বেলা ১১টায় কড়া নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৌছান রানি। ক্যাম্পে পৌঁছে প্রথমে ৩ নম্বর ক্যাম্পে রোহিঙ্গা শিশুদের একটি লার্নিং সেন্টারে পরিদর্শন করে তাদের শিক্ষাদান পদ্ধতি দেখেন। লানিং সেন্টারের রোহিঙ্গা শিশু ও নারীদের সাথে কথা বলেন। এরপর ৪নম্বর ক্যাম্পে গাছের চারা রোপণ করেন। ক্যাম্পে জাতিসংঘের কার্যক্রমগুলো ঘুরে দেখেন তিনি।
ক্যাম্পের ভেতর নারীদের পরিচালিত মার্কেট পরিদর্শন কালে, তাদের দোকান গুলো ঘুরে দেখে তাদের সাথে কথা বলেন রানি।
এরপর আরেকটি ওমেন সেন্টার পরিদর্শনের পর সেখানে থাকা রোহিঙ্গাদের সাথে আলাপ কালে, রোহিঙ্গরা ২০১৭ সালে তাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অত্যাচার ও নির্যাতনের বিষয়টি রানীর কাছে উপস্থাপন করেন। বিভিন্ন সেন্টার, হলিচাইল্ড লার্নিং সেন্টার, উইমেন মার্কেট পরিদর্শন শেষে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা নারীদের সাথে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়েও রাণি কথা বলেন।
দুপুরের মধ্যহ্নভোজ পর রানী, ক্যাম্পের ভেতরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও ট্রিটমেন্ট প্লান্টেশন পরিদর্শন শেষে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেন। এরপর বিকাল সোয়া ৪টায় ক্যাম্প থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্য রওনা দিয়ে সোয়া ৫টায় বিমানবন্দরে পৌঁছান। সন্ধ্যা ৬টার বিমানে তিনি কক্সবাজার ত্যাগ করেন।
এসময় রাণি মাথিল্ডে সঙ্গে ছিলেন, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সফরে আসা বেলজিয়ামের কোনো রাণির এই সফরে বিশেষ গুরুত্ব পায় মানবিক সহায়তা। তারই অংশ হিসেবে বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবির পরিদর্শনে এসেছেন তিনি। যেখানে অবস্থান করছে সাড়ে ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা।
বেলজিয়ামের রানির আগমনকে কেন্দ্র করে পর্যটন নগরী কক্সবাজার ও রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। পুরো ক্যাম্প এলাকায় কয়েক স্তরের নিরাপত্তা জোরদার করে পুলিশ, এবিপিএন সদস্যরা ছাড়াও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনের ব্যাপক তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়। মোতায়েন করা হয় বিভিন্ন পয়েন্টে বিপুল সংখ্যক র্যাব ও পুলিশ।
বিকেল সোয়া ৪টার কিছু সময় পর তিনি রোহিঙ্গা ক্যাম্প ত্যাগ করে সোয়া ৫টার দিকে কক্সবাজার বিমানবন্দর পৌঁছান। সন্ধ্যা ৬টায় নভোয়ারের ফ্লাইটে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন তিনি।
এর আগে, সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ফতুল্লার বিসিক শিল্পনগরী এলাকার ফকির অ্যাপারেলস নামের একটি কারখানা পরিদর্শন করেন তিনি। এসময় কারখানার কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের সার্বিক খোঁজখবর নেন। সেইসঙ্গে কারখানার অবকাঠামো থেকে শুরু করে উৎপাদন ব্যবস্থা ঘুরে দেখেন রানি। পরে রানিকে টি-শার্ট উপহার দেন ফকির অ্যাপারেলসের নারী কর্মীরা।
একইদিন (সোমবার) সকালে এক বিশেষ বিমানে বেলজিয়ামের রানি ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে পররাষ্ট্র মন্ত্রী একে আবুল মোমেন, তথ্যমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ তাকে স্বাগত জানান।
এদিকে, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) দূত হিসেবে বাংলাদেশ সফরে এসেছেন বেলজিয়ামের রানি। এর আগে গত ৩০ জানুয়ারি জারি করা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে রানি আসার কথা জানানো হয়। ওই প্রজ্ঞাপনে রানিকে অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, সফর শেষে ৮ ফেব্রুয়ারি নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার কথা রয়েছে রানির। জাতিসংঘ মহাসচিবের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের ‘অ্যাডভোকেটের’ হিসেবে রানি ম্যাথিল্ডের এই বাংলাদেশ সফর।