৭ নভেম্বর ২০২৫

দিনমজুরির টাকায় বিদেশ পাঠানো ছেলে-ই ঘর ছাড়া করলো মাকে!

জেলা প্রতিনিধি, কক্সবাজার »

দিনমজুরি ও গয়না বিক্রির টাকায় ছেলেকে প্রবাসে পাঠিয়েছিলেন কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা খরুলিয়া কোনারপাড়ার বৃদ্ধা নুর আয়েশা (৭০)। ৯ বছর আগে স্বামী আবুল খাইর মারা যাওয়ার পর ছেলে সাবেরসহ পুরো পরিবারের সচ্ছলতার আশায় তাকে বিদেশে পাঠানো হয়েছিল। এখন ছেলে সচ্ছল। আর বয়সের ভারে অচল মা শারীরিকভাবেও অসুস্থ। এরই মাঝে মোহরানা বাবদ পাওয়া ২০ শতক জমি এবং ভিটেটিও নিজের নামে লিখিয়ে নিয়েছেন প্রবাস ফেরত ছেলে সাবের। সবকিছু মিলিয়ে মাকে সেবায় আগলে রাখার পরিবর্তে মারধর করে ঘর থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন সাবের ও তার স্ত্রী।

এক সন্তানকে সবকিছু লিখে দেওয়ায় খবর নিচ্ছেন না অন্য সন্তানরাও। ফলে জীবনসায়াহ্নে রাস্তায় বা অন্যের দ্বারে ঘুরছেন বৃদ্ধা নুর আয়েশা। মানসিক যন্ত্রণায় নির্ঘুম রাত কাটছে তার। সবকিছু কেড়ে নেওয়ার দু-মাস পার না হতেই বাড়ি ছাড়া হওয়া বৃদ্ধা ছেলের বিচার চেয়ে সবার দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।

স্থানীয়রা জানান, দিনমজুরি করে জমানো টাকায় ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেন মা নুর আয়েশা। সেই সন্তান বৃদ্ধা মায়ের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব না নিয়ে উল্ট নিঃস্ব করে মাকেই রাস্তায় নামালেন সন্তান।

বৃদ্ধা নুর আয়েশা বলেন, বিয়ের ১৪-১৫ বছর পর স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করে অন্যত্র চলে যান। ছোট বাচ্চাগুলো লালন-পালন করতে দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালিয়েছি। একটু সুখের আশায় ছেলে সাবেরকে দিনমজুরির অর্থের পাশাপাশি ধার-দেনা ও জমিজমা বিক্রি করে বিদেশ পাঠাই। টাকার দেখা পেয়ে সাবেরের স্বভাব পাল্টে যায়। আমার নামের ২০ শতক জমি নিজের নামে লিখে নিতে চাপ দেয়। সুখের আশায় জমিটি সাবেরের নামে লিখেও দিয়েছি। গত ছয়মাস আগে বিদেশ থেকে ফিরে বসতবাড়িটিও তার নামে লিখে দিতে নানা তালবাহানা করে। সেটাও রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার কিছুদিন পর আমাকে ঘর থেকে তাড়িয়ে দেয়।

নুর আয়েশা বলেন, স্বামীর দেওয়া ২০ শতক জমিতে চাষাবাদ করে ভালোই চলতো। ছেলে ভালো ও সুখে-শান্তিতে থাকুক এমন ভাবনায় জমি লিখে দিয়েছি। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। ছেলের নিষ্ঠুর আচরণের শিকার হলাম আমি।

অনেকটা নির্বাক নুর আশেয়া অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলেন, জমি-জমা ছেলের নামে রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার দু-মাস না যেতেই ছেলে ও তার বউ ভিন্ন আচরণ শুরু করে। ঠিক মতো খাবার দেয়নি। ভাত দিলেও সঙে তরকারি নেই, বেলা গড়িয়ে দুপুরের ভাত দিলে, সেদিন রাতে আর খাবার দিত না। ছেলেকে এসব কথা জানালে উল্টো আমার ওপর চড়াও হয়ে গালিগালাজ করত। সর্বশেষ আমাকে বসতঘর থেকে বের করে দিয়েছে। আমি নিজের ভিটায় ফিরতে চাই।

সাবেরের বোনেরা অভিযোগ করে বলেন, সাবের বিদেশ থাকাকালীন সময়ে মা-ছোট ভাইয়েরা মিলে ঘরটি তৈরি করে। দেশে ফিরে বাড়িটি সাবের দাবি করে। সর্বশেষে মাকেসহ সবাইকে মেরে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে।

ছোট ভাই আব্দুল্লাহ জানান, জমি লিখে নিয়ে মাকে ঘর থেকে বের করে দেয় সাবের। প্রতিবাদ করলে ভাই ইউনুচ ও ভাগ্নেসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে থানায় উল্টো মিথ্যা মামলা দিয়েছে।

স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি মাস্টার খুরশেদ আলম, আ. লীগ নেতা মো. আলম, শালিসকারক বাদশা মিয়া, শহিদুল্লাহ শকু, ছলিম উল্লাহ বলেন, নুর আয়েশা স্থানীয়দের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ নিয়ে একাধিকবার সালিসও হয়েছে। কিন্তু ছেলে সাবের সালিসের সিদ্ধান্ত অমান্য করে মাকে ঘরে উঠতে দেয়নি। উল্টো মামলা করে মা ও ভাইবোনদের হয়রানি করছেন।

অভিযুক্ত সাবের বলেন, বিষয়টি আমার পারিবারিক। এখানে কাউকে নাক গলাতে হবে না। স্থানীয় সাংবাদিকরা বিষয়টি নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করছেন বলেও মন্তব্য করেন সাবের।

কক্সবাজার সদর থানার ওসি শেখ মুনীর উল গীয়াস বলেন, কেউ অভিযোগ নিয়ে আসেনি- সাংবাদিকদের মাধ্যমে জেনেছি। বিষয়টি অমানবিক। তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাধারা/এআই

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ