কক্সবাজার প্রতিনিধি »
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা বিএনপির ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প বিষয়ক সম্পাদক ও সদর ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি সিদ্দিক আহম্মদের (৫৫) দুই হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। ভাইকে হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে স্থানীয় মেম্বার এনামুল হক ওরফে এনাম মেম্বার তার সন্ত্রাসী বাহিনীর নিয়ে হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এনাম মেম্বার সদ্য সাজাপ্রাপ্ত আত্মস্বীকৃত ইয়াবা কারবারী।
শনিবার (২৬ নভেম্বর) বেলা তিনটার দিকে টেকনাফের সদর ইউনিয়নে নাজিরপাড়া মাদ্রাসা এলাকায় ঘটনা ঘটে।
আহত সিদ্দিক আহম্মদ (৫৫) নাজিরপাড়া এলাকার মৃত নজির আহমদের ছেলে। তিনি বিগত ৬ বছর ধরে স্বপরিবারে কক্সবাজার শহরে বসবাস করছেন। তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সদর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের সদস্য এনামুল হক।
পুলিশ, আহতের পরিবার ও স্থানীয় লোকজন থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, ২০১৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর আত্মস্বীকৃত ইয়াবা কারবারী এনাম মেম্বারের বড়ভাই আজিজুল হক মার্কিনকে বাড়িতে ঢুকে দিনদুপুরে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এই ঘটনায় আহত ছিদ্দিককে প্রধান ও তার আত্মীয়-স্বজনদের আসামী করে মামলা করেন নিহতের পরিবার। ওই মামলার পর থেকে ছিদ্দিক এলাকা ছেড়ে কক্সবাজার শহরে চলে আসে। শনিবার তিনি টেকনাফে সাবরাংয়ে তার অসুস্থ মেয়েকে দেখতে যান। সেখানে মোটর সাইকেল যোগে ফেরার পথে নাজির পাড়া মাদ্রাসার সামনে পাকা রাস্তার উপর ব্যারিকেড দিয়ে ইউপি সদস্য আত্মসমপর্ণকারী এনামুল হকের নেতৃত্বে ১০-১৫ জনের একটি দল ছিদ্দিককে গাড়ি থেকে নামিয়ে ফেলে। পরে এনাম মেম্বারের আস্তানায় নিয়ে তার হাতের কব্জির উপর থেকে হাত দুটি কেটে নিয়ে যায় হামলাকারীরা। এরপর মাঠে এসে কর্তন করা হাত দুটি নিয়ে উল্লাস করে ইয়াবাকারবারীরা।
গ্রামবাসী এগিয়ে এসে রক্তাক্ত অবস্থায় ছিদ্দিককে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে কর্মরত চিকিৎসক তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক নাছিম ইকবাল জানান, দুই হাতের কব্জির বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রক্তাক্ত এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসে স্বজনরা। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার রেফার করা হয়েছে।
আহতের আত্মীয় ও একই ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য হাম জালাল বলেন, এনামের ভাইকে হত্যার দায়ে ছিদ্দিকসহ তার আত্মীয়দের বিরুদ্ধে মামলা করে পরিবারটি। চলতি বছরেই ওই মামলার রায় হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। কিন্তু আত্মসীকৃত ইয়াবা কারবারী এনাম মেম্বার ওই হত্যাকে পুঁজি করে এলাকায় একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করেছে। সেই বাহিনীর দ্বারা এলাকার নিরীহ লোকজনের জায়গা সম্পত্তি দখল, প্রতিবাদী লোকজনকে হত্যাসহ নানা অপকর্ম করছে। কিছুদিন আগে এনাম তার আপনার চাচাত ভাই ভুট্টোকে কৌশলে হত্যা করিয়েছে। তারও আগে ছিদ্দিকের পরিবারের সবকিছু দখল করে নিয়েছে এনাম বাহিনী।
তিনি আরও বলেন, এই বাহিনীর ভয়ে ছিদ্দিক ও তার অনেক আত্মীয় এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। শনিবার ছিদ্দিক তার অসুস্থ মেয়েকে দেখে কক্সবাজার ফেরার পথে ইউপি সদস্য এনামুল হক ও তার ভাই চাঁদ মিয়া, সাহাব মিয়াসহ একদল ইয়াবাকারবারী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ছিদ্দিককে গাড়ি থেকে নামিয়ে হামলা চালায়।
তবে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য এনামুল হক বলেন, ছিদ্দিক, হাম জালাল দুইজনেই আমার ভাই মার্কিন হত্যা মামলার আসামী। তাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা চলছে। মামলায় তারা দোষী সাব্যস্ত হবে। আর সেই রায়কে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতেই আমাকে আসামী করতে উঠে পড়ে লেগেছে চক্রটি। বর্তমানে আমার কোন ভাই কিংবা আত্মীয় টেকনাফে থাকে না।
তিনি আরো বলেন, ছিদ্দিক একজন ইয়াবা কারবারী, তার সাথে অনেকের দ্বন্দ আছে । আমি শুনেছি খোরশেদ ও আবূ ছৈয়দসহ আরো কয়েকজন মিলে এঘটনা ঘটিয়েছে।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল হালিম বলেন, এক ব্যক্তির দুই হাত কর্তন করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। আহতকে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল পাঠানো হয়েছে। কে বা কারা হামলা করেছে, কি কারণে হামলা করছে তা জানার পাশাপাশি হামলাকারীদের ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে













