বাংলাধারা প্রতিবেদক »
দেশের অন্যতম শিল্পপ্রতিষ্ঠান পিএইচপি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, একুশে পদকপ্রাপ্ত ও সমাজসেবক সুফি মিজানুর রহমানের ৮১তম জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানালেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। রোববার (১২ মার্চ) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক একাউন্টে এই শুভেচ্ছা জানান।
নওফেল তাঁর স্টাটাসে লিখেন, ‘সুফি মিজানুর রহমান, শুধুই একজন শিল্প উদ্যোক্তা বা সফল ব্যবসায়ী নন তিনি। আমাদের সুফি মিজান আংকেল অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত এবং নৈতিক মূল্যবোধে সমৃদ্ধ একজন সফল মানুষ। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে চট্টগ্রামে এসে চট্টগ্রামের মানুষকে আপন করে নিয়েছেন। সারাদেশের মানুষ আজ উনাকে নিয়ে গর্ববোধ করে। ছোট বেলা থেকে দেখে আসছি তাঁকে, মানবসেবার লক্ষ্য নিয়ে ব্যবসা করে আসছেন। তিনি সুস্থ থাকুন, দেশের সমাজ ও অর্থনীতিকে অনেক অনেক কিছু দেয়ার আছে উনার, আংকেলের জন্মদিনে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা।’
১২ মার্চ ছিল সুফি মিজানুর রহমানের জন্মদিন। তিনি দেশবরেণ্য এ শিল্পপতি, অনেকের আইডল, পথপদর্শক। শুধু সুফিজম কিংবা ব্যক্তি হিসেবেই নন তারুণ্যের কাছে সুফি মিজানুর রহমান একটি প্রতিষ্ঠান। যাঁর কণ্ঠ থেকে বেরিয়ে আশা প্রতিটি শব্দ ধারন করেন, লালন করেন অনেকেই। তাঁরই দেখিয়ে দেওয়া পথে হাঁটতে ভালোবাসেন এই প্রজন্ম।
সুফি মিজানুর রহমান একাত্তর পরবর্তী সময়ে ব্যবসা শুরু করেন চট্টগ্রাম। এর আগে তিনি একটি ব্যাংকে সামান্য বেতনের চাকরি করতেন। অর্ধশত বছরে ব্যবসায়ি হিসেবে তিনি শুধু তাঁর নিজেকেই গড়েননি। তিনি গড়েছেন সন্তানদেরও। শিক্ষা ও জ্ঞানে সুফি মিজানের ৮ সন্তান আজ ঈর্ষণীয়।
ব্যবসায়ি হিসেবে সুফি মিজানের অর্ধশত বছরের পথচলায় কর্মসংস্থান প্রায় ১০ হাজার মানুষের। এই দশ হাজার মানুষের ওপর নির্ভর করে জীবন নির্বাহ করছেন লাখো পরিবার।
বন্দরনগরী চট্টগ্রামে শিল্প-বাণিজ্যের ডালপালা ছাড়ানো সুফি মিজানের জন্ম নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জে। তবে চট্টগ্রামেই তার স্থায়ী নিবাস। ৮১ বছরে পা দেওয়া সাদামাটা মানুষটি শুধু দেহেই নয় মনেও বড় হয়েছেন দ্যুতি ছড়ানো সুফিয়ানায়। যারা তাকে খুব কাছে থেকে চেনেন, তারা জানেন ধর্মপ্রাণ সুফি মিজান বছরের অধিকাংশ দিনই রোজা করেন। আর খাবারের তালিকাও অতি সাধারণ। সদা হাস্যোজ্জ্বল বিনয়ী একজন মানুষ সুফি মিজান।
লোকমুখে শোনা যায়, কোনও সাক্ষাতে সুফি মিজানের আগে কখনো তাকে কেউ সালাম দিতে পারে না, তিনিই আগে সালাম দিয়ে হাত বাড়ান। অনেক বড় শিল্পপতি হয়েও তাঁর সাধারণ কিছু গুণ তাকে সাধারণের কাছে অসাধারণ একজন মানুষ প্রতিষ্ঠিত করেছে।
সাত ছেলে, এক মেয়ের জনক তিনি। ছেলেদের মধ্যে চার জন অস্ট্রেলিয়া এবং বাকি তিন জন যুক্তরাষ্ট্র থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন। কিন্তু তাদের মধ্যে কেউই বিদেশে স্থায়ী নিবাস গড়েননি। দেশে ফিরে বাবার গড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর হাল ধরেছেন। ছেলেরা নতুন নতুন শিল্প গড় বাবার প্রচেষ্টাকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে গেছেন ও যাচ্ছেন। তাঁদের সাথে যুক্ত হয়েছেন সুফি পরিবারের তৃতীয় প্রজন্ম ভিক্টর মহসিন।
সহধর্মিণী তাহমিনা রহমান ছাঁয়ার মতোই পাশেপাশে থাকেন সুফি মিজানের সাথে। অনুপ্রেরণা দেন, দেন পরামর্শও। সেকারণে স্ত্রী তাহমিনাকে ‘মহিয়সী নারী’বলেই সম্মোধন করেন সুফি মিজান।
স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে এ পর্যন্ত মাত্র দুইজন শিল্প উদ্যোক্তাকে একুশে পদক দেয়া হয়। প্রথম ব্যবসায়ী শিল্প উদ্যোক্তা হিসেবে মরণোত্তর পুরস্কার পেয়েছিলেন দেশের অন্যতম শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্কয়ার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা স্যামসন এইচ চৌধুরী। ২০২০ সালে দ্বিতীয় পুরস্কারটি পেলেন জীবদ্দশায় দেশের আরেক সফল শিল্পপ্রতিষ্ঠান পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। পিএইচপির বাংলা অর্থ হল, ‘সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধির ছায়া।’
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে সুফি মিজানুর রহমান ব্যবসা শুরু করেন ব্যাংক কর্মকর্তার সামান্য চাকরি ছেড়ে। এ পাঁচ দশকেই তিনি গড়েছেন ৩৩টি প্রতিষ্ঠান। যাতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে প্রায় ১০ হাজার কর্মজীবী। তাঁর গড়া প্রতিষ্ঠানগুলো বছরে লেনদেন করে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। সরকারকে ভ্যাট, শুল্ক ও আয়কর বাবদ প্রতিবছর পরিশোধ করে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা।
২০টির বেশি কোম্পানিসমৃদ্ধ গ্রুপের নাম দিয়েছেন পিএইচপি-শান্তি, সুখ-সমৃদ্ধির ইংরেজি শব্দের আদ্যাক্ষর দিয়ে। রোববার (১২ মার্চ) তাঁর ৮১তম জন্মদিন। জন্মদিনে কামনা, তিনি আরও অনেক বছর শান্তি, সুখ ও সমৃদ্ধির আদর্শে দেশের মানুষকে উজ্জীবিত করবেন।












