কক্সবাজারের উখিয়ায় জালিয়াপালংয়ে র্যাবের টহল দলের ওপর হামলার ঘটনায় গুলিবিদ্ধ এক বিএনপি নেতার মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া একই ঘটনায় বিএনপির ৪২ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে র্যাব।
গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া বিএনপি নেতা জাগির হোসেন (৩৮) জালিয়াপালং ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তিনি পাইন্যাশিয়া গ্রামের মৃত মো. আলমের ছেলে।
মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন জাগিরের ভাতিজা শিহাব উদ্দিন বলেন, হামলার সময় তাঁর চাচার (জাগির) পেটে গুলি লাগে। এরপর তাঁকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে।
এদিকে এঘটনার জের ধরে- বুধবার (৮ নভেম্বর) কক্সবাজার জেলায় সকাল-সন্ধ্যা পূর্ণ দিবস হরতাল ডেকেছে জেলা বিএনপি। মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে জেলা বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট হাসান ছিদ্দিকী হরতালের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জেলা বিএনপির পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গেল ৫ নভেম্বর রাতে উখিয়া উপজেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক সুলতান মাহমুদ চৌধুরীর বাসায় অভিযান চালাই র্যাব ও পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের কর্মীরা। তাকে না পেয়ে ঘর ভাংচুর এবং গ্রামবাসির উপর গুলি চালায়। এতে ৩ জন বিএনপি কর্মী গুরুতর আহত হয়। আহতদের মধ্যে স্থানীয় বিএনপি নেতা জাগির হোসেন মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রামের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। নিহত জাগির হোসেন উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের পাইন্নাশিয়া গ্রামের মোহাম্মদ আলমের ছেলে এবং সাবেক যুবদল নেতা ও বর্তমান জালিয়াপালং ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক।
জাকের নিহত হওয়ার প্রতিবাদে বুধবার কক্সবাজার জেলায় সকাল সন্ধ্যা হরতালের ঘোষণা করা হয়েছে।
জেলা বিএনপি অংগ ও সহযোগী সংগঠনের সকলস্তরের নেতা-কর্মী এবং জনগণকে বুধবার সকাল ৬টা হতে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পূর্ণ দিবস শান্তিপূর্ণভাবে রাজপথে থেকে হরতাল পালনের আহবান জানিয়েছেন জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামীম আরা স্বপ্না।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নিহত জাগির হোসেন উখিয়া থানায় র্যাবের করা মামলায় ১৪ নম্বর আসামি। ১ নম্বর আসামি করা হয় উখিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সোলতান মাহমুদ চৌধুরীকে। র্যাব বাদী হয়ে মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) সকালে উখিয়া থানায় এ মামলা করে। মামলার এজাহারে সংখ্যা উল্লেখ না করে অজ্ঞাতনামা ‘অনেক আসামি’ করা হয়।
সূত্র জানায়, গত রোববার মধ্যরাতে র্যারের টহল দল নাশকতা মামলার আসামি উখিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সোলতান মাহমুদ চৌধুরীসহ অন্য আসামিদের ধরতে জালিয়াপালং ইউনিয়নের পাইন্যাশিয়া গ্রামে গেলে হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় বিএনপির কয়েক শ নেতা-কর্মী-সমর্থক লাঠিসোঁটা নিয়ে র্যাবকে ঘিরে ইটপাটকেল ছোড়তে থাকেন। একপর্যায়ে উভয় পক্ষে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। ইট-পাটকেলের আঘাতে র্যাবের একটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হয় জাগির হোসেনসহ তিনজন।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, র্যাবের ওপর হামলার ঘটনায় থানায় বিএনপির ৪২ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তবে এ মামলায় তখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি। ওসি বলেন, উভয় পক্ষের গোলাগুলিতে আহত জাগির হোসেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী র্যাবের ওপর হামলার ঘটনা ‘ভুল-বোঝাবুঝি’ দাবি করে বলেন, বিএনপি শান্তিপূর্ণ অবস্থানে থেকে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালন করে আসছে। কিন্তু গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুরসহ নাশকতার মামলায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের আসামি করে এলাকা ছাড়া করা হচ্ছে। গভীর রাতে আসামি ধরার নামে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ঘরবাড়িতে র্যাবের তল্লাশির ঘটনায় সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।
সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি-জামায়াতের ঢাকা দেশব্যাপী সকাল সন্ধ্যার হরতালে উখিয়াতে সড়ক অবরোধ করে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরে অভিযোগে বিএনপি নেতা সোলতান মাহমুদ চৌধুরীকে প্রধান আসামি করে উখিয়া থানায় ৩৫ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগে মামলা করে পুলিশ। গত ৩০ অক্টোবর উখিয়া থানায় মামলাটি করেন ওই থানার এসআই মো. আবদুল ওয়াহেদ। মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত পুলিশ ওই মামলার চারজন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে।
হামলার ঘটনার ব্যাপারে র্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের সিনিয়র সহকারী পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরী বলেন, পাহাড় ঘেরা পাইন্যাশিয়া গ্রামের অধিকাংশ মানুষ বিএনপি-জামায়াত সমর্থক। ওই গ্রামে সোলতান মাহমুদের বাড়ি। পাইন্যাশিয়াসহ আশপাশের কয়েকটি এলাকার বিএনপি নেতা-কর্মীরা ঢাকা, কক্সবাজার ও উখিয়াতে হরতাল অবরোধ কর্মসূচি চলার সময়ে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুরসহ নাশকতা মামলার আসামি। রোববার রাতে নাশকতা মামলার আসামিদের ধরতে র্যাবের একটি টহল দল পাইন্যাশিয়া গ্রামে গেলে বিএনপির নেতা-কর্মীসহ কয়েক শ মানুষ র্যাবকে ঘিরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। এ সময় গুলিও ছোড়া হয়। একপর্যায়ে র্যাবের একটি গাড়ির কাচ ভেঙে যায়। তখন পরিস্থিতি সামাল দিতে র্যাব কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে।













