২৪ অক্টোবর ২০২৫

কর্ণফুলী ক্রীড়া সংস্থা নিয়ে বিতর্ক, কমিটি বাতিল চেয়ে অভিযোগ

কর্ণফুলী উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যকরি নতুন কমিটি গঠনে ঝিমিয়ে পড়া ক্রীড়াঙ্গন প্রাণ ফিরে পেলেও এক অভিযোগে হঠাৎ পুরো উপজেলাজুড়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে গতকাল ১৫ মার্চ উপজেলার ৯ ক্রীড়া সংগঠক নতুন কমিটি বাতিল চেয়ে একটি লিখিত অভিযোগও করেছেন উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বরাবর।

অভিযোগে দাবি করেন, নতুন কমিটি জাতীয় ক্রীড়া সংস্থার গঠনতন্ত্র মোতাবেক গঠন করা হয়নি। কর্ণফুলীর ক্রীড়াঙ্গনে যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত এমন সদস্যের জানানো হয়নি। অগোচরে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে, ক্রীড়া সংগঠকদের মূল্যায়ন করা হয়নি, আবার ক্রীড়ার সাথে জড়িত নয়— এমন ব্যক্তিদেরও কমিটিতে পদায়ন করা হয়েছে।

লিখিত অভিযোগকারীরা হলেন— শিকলবাহা ক্রীড়া চক্রের সভাপতি মো. মুছা, শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার ইসলাম আহমেদ, সাবেক খেলোয়াড় ও সমাজ ক্যালণ’র সভাপতি ইউপি সদস্য সাইফুদ্দিন মানিক, উপজেলা ক্রিকেট ও সমাজ ক্যালণের সহ-সভাপতি আবু জাফর ছিদ্দিক (বাবু), সাবেক খেলোয়াড় ও মিতালি সংঘের সভাপতি আকতার জাবেদ, সাবেক খেলোয়াড় ও ক্রীড়া সংগঠক আহম্মদ শরীফ মনির, কর্ণফুলী ক্রিকেট একাডেমির সভাপতি ও সাবেক খেলোয়াড় মো. সালা উদ্দিন, এএফসি কোচ ও ক্রীড়া সংগঠক মো. ফরিদ এবং শিকলবাহা স্পোর্টস ক্লাবের সভাপতি মো. ইয়াছিন আরাফাত।

কিন্তু উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা এসব দাবির সব ক’টি সর্বৈব অসত্য বলে মন্তব্য করেছে। ক্রীড়া সংস্থার বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সেলিম হক জানান, ‘গতবার যেভাবে কমিটি হয়েছে এবারও একই পদ্ধতিতে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।’

জানা যায়, জাতীয় ক্রীড়া সংস্থার গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যারা খেলাধুলায় অংশ গ্রহণ করেন, তাঁরাই ক্রীড়া সংস্থার প্রতিনিধি হন। কর্ণফুলী একটি নতুন উপজেলা সেজন্য নির্বাচন করে কমিটি গঠন করার মতো অবস্থা তৈরি হয়নি। ফলে, সাধারণ সভা ডেকে কমিটি গঠন করা হয়। এতে পূর্বের কমিটির অনিয়মিত কয়েকজন সদস্যও বাদ পড়েছেন।

উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা আরও জানান, গত ৪ বছরে কর্ণফুলী উপজেলায় ক্রীড়া সংস্থা কতৃক যে সমস্ত টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হয়েছে, যেমন-আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট, দাবা প্রতিযোগিতা, সাঁতার প্রতিযোগিতা, আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ফুটবল লীগেও অভিযোগকারী ৯ সংগঠকের কেউ অংশ গ্রহণ করেননি।

অপরদিকে, কর্ণফুলীর সিংহভাগ ক্রীড়াবিদ বলছেন, যারা নতুন কমিটি বাতিল চেয়েছেন, তাদের এটি দূরভিসন্ধিমূলক পরিকল্পিত ইস্যু। কেননা, একই হাতের লেখায় একই কলমের কালিতে স্বাক্ষর করা কাগজে অভিযোগ করে বিতর্ক সৃষ্টি করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বর্তমান ক্রীড়া সংস্থা কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘শুধুমাত্র রাজনৈতিক গ্রুপিং-এর কারণে এসব অভিযোগ। মাননীয় সংসদ সদস্য ও সংস্থার উপদেষ্টা সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি’র পরামর্শেক্রমে ক্রীড়া সংস্থার কমিটি গঠন করা হয়। এরপর থেকে রাজনৈতিকভাবে বিভাজনের পর সাবেক ভূমিমন্ত্রী বিরোধী গ্রুপের লোকজন এ অভিযোগ করেছেন।’

উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার একাধিক নেতা জানান, অতীতে ক্রীড়া সংস্থায় ৪৯টি আবেদন পড়েছে। কিন্তু বারবার ইউএনও বদলির কারণে কাউকে সদস্য পদ দেয়া হয়নি। যারা খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করেছেন তাঁদেরকেই কমিটিতে রাখা হয়েছে। সবাই ক্রীড়া সংগঠক আর সাবেক খেলোয়াড়।

মহিলা নেত্রী ও ক্রীড়া সংগঠক বর্তমান কমিটি নির্বাহী সদস্য মোমেনা আকতার নয়ন বলেন, ‘তৃণমূল পর্যায়ে খেলোয়াড় তৈরির জন্য উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার কোনো বিকল্প নেই। তবে দীর্ঘদিন ক্রীড়া সংস্থার কমিটি না থাকায় ক্রীড়াঙ্গন স্থবির ছিল। বর্তমানে উপজেলার ক্রীড়াপ্রেমিরা মেধা বিকাশের সুযোগ পাবেন। কিশোর-তরুণরা বিভিন্ন খেলা বঞ্চিত হবেন না।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাসুমা জান্নাত বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে শুনানিক্রমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

প্রসঙ্গত, গত ৭ মার্চ (বৃহস্পতিবার) ৪ বছরের জন্য কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাসুমা জান্নাতকে সভাপতি ও মুহাম্মদ সেলিম হককে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে ২৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়।

কমিটিতে কমিটির মুখ্য উপদেষ্টা হিসেবে চট্টগ্রাম-১৩ আসনের সংসদ সদস্য ও উপদেষ্টা হিসেবে কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে মনোনীত করা হয়।

আর বাকিরা সদস্যরা হলেন— সহ-সভাপতি কর্ণফুলী থানার অফিসার ইনচার্জ মো. জহির হোসেন, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান দিদারুল ইসলাম চৌধুরী, চরলক্ষ্যার ইউপি চেয়ারম্যান মো. সোলায়মান তালুকদার, দৌলতপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি শহিদুল আলম চৌধুরী, অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক পদে ক্রীড়া সংগঠক মহিউদ্দিন মুরাদ, যুগ্ম-সম্পাদক পদে ওয়াসিম আহমেদ মারুফ, যুগ্ম-সম্পাদক শাহরিয়ার মাসুদ, কোষাধ্যক্ষ আলমগীর বাদশা ও নির্বাহী সদস্য হিসেবে উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, উপজেলা মাধ্যমিক মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা, উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা (তখন যিনি দায়িত্বে থাকবেন), জুলধা ফুটবল একাডেমীর শেখ মুহাম্মদ, বড় উঠান স্পোর্টস৷ একাডেমির সাজ্জাদ খান সুমন, ক্রীড়া সংগঠক আলমগীর কবির, কালারপোল ক্রীড়া সংস্থা ফুটবল একাডেমির এম এ রহিম, সিপিপির আব্দুল মাবুদ বাবুল, বড়উঠান ক্রীড়া সংস্থা ফুটবল একাডেমির সাইদ খান আরজু, কর্ণফুলী বয়েজ ক্লাবের ওয়াজ উদ্দিন আজাদ, চরলক্ষ্যা স্পোর্টস একাডেমির ফরহাদ জিতু, সংরক্ষিত সদস্য হিসেবে মহিলা নেত্রী ও ক্রীড়া সংগঠক মোমেনা আকতার নয়ন ও বসুন্ধরা শুভ সংঘ কর্ণফুলীর শারমিন আকতার মনি।

জানা যায়, ২০১৮ সালে গঠিত হয় কর্ণফুলী উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা। এ কমিটির মেয়াদ শেষ হয় গত ৯ সেপ্টেম্বর।

আরও পড়ুন