৭ ডিসেম্বর ২০২৫

আজ পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী

সম্পাদকীয়  »

আজ পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী। মহানবী হযরত মুহম্মদ (সা) এর জন্ম ও মৃত্যুর পুণ্য স্মৃতিময় দিন। ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের এই দিনে অর্থাৎ, ১২ রবিউল আউয়াল তিনি আরবের মক্কা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। ৬৩ বছর বয়সে এই দিনেই ইন্তেকাল করেন তিনি। পৃথিবী, চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র তাঁর আগমনের প্রতীক্ষায় ছিল। আবার আল্লাহ প্রদত্ত সব দায়-দায়িত্ব সফলভাবে সম্পাদন করে এই দিনে তিনি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পবিত্র সান্নিধ্যে চলে যান। আজকের দিনটি তাই অত্যন্ত পবিত্র, মহিমান্বিত ও অনন্য। যুগে যুগে মানুষকে সঠিকভাবে পরিচালিত করার জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। আমাদের প্রিয়নবী রাসূলে করিম হযরত মুহম্মদ (সা) তাঁদের মধ্যে শেষ ও শ্রেষ্ঠ। সমগ্র মানবজাতির কল্যাণের জন্য তিনি শান্তি ও কল্যাণের বাণী নিয়ে এসেছিলেন। মানবজাতির কল্যাণেই উৎসর্গীকৃত ছিল তাঁর বর্ণাঢ্য ও কর্মময় জীবন। তিনি ছিলেন ন্যায়নিষ্ঠ, সৎ, সত্যবাদী এক মহাপুরুষ। মানবের মুক্তি ও কল্যাণ কামনা করেছেন তিনি এবং সে লক্ষ্যেই ব্যয় করেছেন জীবনের সবটুকু সময়। নবুয়ত প্রাপ্তির আগেই তাঁর সততা ও সত্যবাদিতা স্বীকৃতি পায়। আলামিন উপাধিতে ডাকা হতো তাঁকে। যে সময় মহানবী (সা) এর আবির্ভাব, তখন আরব ছিল কুসংস্কারের অন্ধকারে আচ্ছন্ন একটি পশ্চাৎপদ জনপদ। সামাজিক অনাচার আর অবিচার ছিল নিত্যনৈমিত্তিক। তখন মানুষের জীবনে কোন শান্তি ছিল না। ছিল না ন্যূনতম স্বস্তি। দাস প্রথা আর গোত্র বিবাদ ছিল আরব জাতির অগ্রগতির প্রধান অন্তরায়। আর ছিল নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতা। ছিল না শিক্ষার কোন আলো। হযরত মুহম্মদ (সা) সেই ঘোর অন্ধকার থেকে মানব জাতিকে কল্যাণের পথে আনেন। মানুষের জীবনকে কলুষমুক্ত ও আলোকিত করে তোলার লক্ষ্যে হযরত মুহম্মদ (সা) প্রথমে নিজের জীবনকে সততা ও ন্যায়ের প্রতীকরূপে গড়ে তোলেন। তিনি যে আলোর পথ দেখিয়েছেন তা শুধু আরব জাতির জন্য নয়, সমগ্র মানব জাতির জন্য অনুকরণীয় ও অনুসরণযোগ্য। ব্যক্তিগতভাবে সব মানবীয় সদ্গুণের সর্বোত্তম দৃষ্টান্ত ছিলেন তিনি। তিনি শিখিয়েছেন সামাজিক ন্যায়বিচার, পরস্পরের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ ও ভালবাসা। মানুষকে সংযমী হওয়ার শিক্ষা যেমন দিয়েছেন, তেমনি ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি এসবের চর্চা করেছেন। কাজের ভেতর দিয়ে তিনি মানুষের মনে এই বোধ জাগ্রত করেছিলেন যে, মানুষ হচ্ছে সৃষ্টির সেরা জীব, আশরাফুল মাখলুকাত। সমাজ সংস্কারক হিসেবে মহানবী হযরত মুহম্মদ (সা) সর্বকালের সর্বমানবের আদর্শ। সমাজে নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। মানুষ মানুষের ভাই- এই বোধ তিনিই মানুষের মাঝে জাগিয়ে তুলেছেন। সমাজে শ্রমিকের অধিকারও প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। হযরত মুহম্মদ (সা) এর জীবনাদর্শ অনুসরণ করে আমরা সব ধরনের অন্যায়-অবিচার থেকে মুক্তি পেতে পারি। পৃথিবীর অনেক দেশে আজও মানুষ মৌলিক অধিকার বঞ্চিত। ব্যাহত হচ্ছে শান্তি, বাড়ছে সন্ত্রাস, হিংসা, দ্বেষ, হানাহানি। ইসলাম ধর্মের নামে জঙ্গীবাদের যে বিস্তার ঘটেছে তা কোনভাবেই শান্তির ধর্ম ইসলাম সমর্থন করে না। বিশ্বে অসহিষ্ণুতা বেড়ে যাওয়ায় বল প্রয়োগের প্রবণতাও যেন বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অবস্থায় মহানবী হযরত মুহম্মদ (সা) এর বাণী বিশ্বশান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। তাঁর শিক্ষাকে পাথেয় করে পথ চলতে পারলেই দূর হবে সব অন্যায়, অবিচার, অশান্তি ও অনাচার। তাঁর আদর্শই সমাজে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠা করবে।

বাংলাধারা/এফএস/এআর

আরও পড়ুন