ksrm-ads

২১ এপ্রিল ২০২৫

ksrm-ads

রেলের কোন দোষ তদন্তে থাকবে কি!

মাকসুদ আহম্মদ, বিশেষ প্রতিবেদক »

মিরসরাইয়ে ১৩ পর্যটকের মৃত্যুর নেপথ্যে রয়েছে গেটম্যানের গাফিলতি ও মাইক্রো চালকের অবৈধ রেল লাইন পারাপারের চেষ্টা। এ ঘটনার তদন্তে রেলের কোন দোষ থাকবে কিনা তা নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। এমনও প্রশ্ন উঠছে, মৃত্যুর তালিকা আর রেলের আইনের দোহাইয়ে তদন্ত রিপোর্টের মৃত্যু হয় কিনা। কারণ রেল লাইনের ১৬ ফুটের মধ্যে কোন প্রাণীর প্রবেশ নিষেধে ১৪৪ ধারা জারি থাকে।

গত ২৯ জুলাই দুপুর দেড় টায় মিরসরাইয়ের বারতাকিয়া স্টেশনে দুটি আন্তঃনগর ট্রেনের ক্রসিং ছিল। এসময় অবৈধ ভাবে আউটার সিগন্যাল ও ব্যারিয়ার উপেক্ষার অভিযোগ মাইক্রো চালকের বিরুদ্ধে। যদিও মাইক্রোর চালক মারা গেছে এ ধরনের অভিযোগ পূর্বাঞ্চলীয় মহাব্যবস্থাপকের কাছে করা হয়েছে গেটম্যানের পক্ষ থেকে। ফলে গত শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে মাইক্রো পারাপারের সময় ১১ টগবগে তরুণের মৃত্যু হয়েছে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৫০০ মিাটার দূরে রেললাইনের উপরে মাইক্রোর ভেতরেই। পরে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো দুই জনের মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে, ট্রেন চালক ডিভিশনাল ট্রান্সপোটেশন অফিসার (ডিটিও) কে বলছেন আমি লাইনের উপর মাইক্রো দেখলেও কিছুই করার ছিল না। কারণ আমাকে কমপক্ষে ৫ কিমি. আগ থেকে ইঞ্জিনের নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। এছাড়াও বারতাকিয়া স্টেশনে কোন স্টপেজ নেই যে আগে থেকে ট্রেন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। স্টেশনের ঊপর দিয়ে ট্রেন চলাচলের সর্বনিম্ন গতি ১৬ কিমি.। এখন প্রশ্নবিদ্ধ এই মৃত্যুর দায় ভারকি মৃত্যুতেই শেষ হয়ে যাবে।

এ মৃত্যুর পেছনে মূল কারণ হচ্ছে রেল ট্র্যাক আইন অমান্য করা। গেট কিপার মিরসরাই ও বারতাকিয়া স্টেশন মাস্টারের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যারিয়ার ফেললেও তা মেনে নেয়নি ১৪ তরুণ পর্যটকের দল ভর্তি মাইক্রো চালক। রাস্তার উত্তর দিকের ব্যারিয়ার ফেলা হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু দক্ষিণ দিকের ব্যারিয়ার টি নামানো হয়নি। তবে আউটার সিগন্যালের ট্র্যাকে ট্রেন না দেখার কোন কারণ ছিল না। জোর করে লাইনে উঠে দুর্ঘটনার স্বীকার হয়েছে মাইক্রো(চট্টমেট্রো-চ-৫১-২৩৫০) চালক সমেত ১৪ পর্যটকের গাড়ি। এক্ষেত্রে রেল কর্তৃপক্ষের কোন দায় না থাকলেও দায়সারা গোছের তদন্ত রিপোর্ট তৈরি করে তা জমা দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে মোট ৭ কার্যদিবসের মধ্যে।

অভিযোগ উঠেছে, ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি পরিবহন মালিক সমিতিকে ছাড়া এমন রিপোর্ট প্রদান করলে আগামীতেও এ ধরনের দুর্ঘটনায় অনেক তাজা প্রাণ বলি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ ব্যাপারে রেলের পূর্বাঞ্চলীয় ডিভিশনাল ট্রান্সপোটেশন অফিসার (ডিটিও) আনসার আলী বাংলাধারাকে বলেন, আমাকে প্রধান করে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পর্যটকের দলটি অবৈধভাবে রেল লাইন পারাপারের চেষ্টা করেছে। ট্রেন চলাকালীন সময়ে রেল লাইনের ১৬ ফুটের মধ্যে কোন ধরনের প্রাণীর প্রবেশ নিষেধ। এমনকি রেল এ ধরনের কোন অঘটনের দায়িত্ব নেয় না। কারণ সেখানে ১৪৪ ধারা জারি থাকে।

বারতাকিয়া স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, দুপুর ১টা ৩৫মিনিটের এ ঘটনায় চট্টগ্রামমূখী ডাউন লাইনের পয়েন্ট মেশিনটিও নষ্ট হয়ে গেছে। প্রকৌশল বিভাগের এনালগ এই গেটটিতে দুটি ম্যানুয়েল ব্যারিয়ার রয়েছে। ফলে দুটি ব্যারিয়ার একসঙ্গে ফেলা যায় না। শুক্রবার জুমার নামাজের সময় গেটম্যান সাদ্দাম হোসেন শুধুমাত্র দক্ষিণ দিকের ব্যারিয়ারটি নামিয়ে নামাজে চলে যায়। এসময় বারতাকিয়া স্টেশনে দুটি ট্রেনের ক্রসিং ছিল। এরমধ্যে একটি চট্টগ্রাম থেকে উর্ধ্বগামী মহানগর এক্সপ্রেস এবং অন্যটি ঢাকা থেকে নিম্নগামী মহানগর প্রভাতী এক্সপ্রেস।

জানা গেছে, ভোর সকালেই ৩ শিক্ষকসহ ১৪ জন ঘর থেকে বেরিয়ে যুগিরহাটসস্থ কোচিং সেন্টারের সামনে গিয়েছে। হাটহাজারীর যুগিরহাটস্থ শেখ মার্কেটের নীচতলায় থাকা কোচিং সেন্টারের ৩শিক্ষকসহ ১৪ ছাত্রের আনন্দ ভ্রমণ মাটি হয়ে গেল মাত্র ৫মিনিটেই মিরসরাইতে। দুপুর দেড়টার দিকে খৈয়ারছড়া পাহাড়ী ঝরণা দেখে ফেসবুকে ছবি আপলোড করেই বারতাকিয়াস্থ রেল গেটে পৌছায়।

স্থানীয় লোকমান হোসেন বলেছেন, রেল লাইনের উত্তর দিকের ব্যারিয়ার না থাকায় মাইক্রোর চালক ও যাত্রীরা মিটার গেজ ডাবল ট্র্যাক পার হওয়ার চেষ্টা করে। ১টা ৩৫ মিনিটে ডাউন লাইনে উঠতেই চট্টগ্রামমুখী মহানগর প্রভাতির ইঞ্জিনের সঙ্গে মাইক্রোটি সজোরে ধাক্কা লাগে। চোখের পলকে মাইক্রোটি ইঞ্জিনের (৩০২৩ সিরিয়ালের) বাফার ও এবিসি কাপলারের সঙ্গে আটকে যায়। চালক ইঞ্জিনের গতি নিয়ন্ত্রণ করতে করতে চলে যায় আরো প্রায় ৫০০ মিটার।

মহানগর প্রভাতীর চালক পূর্বাঞ্চলীয় জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেনকে জানিয়েছেন, বাফারের এবিসি কাপলারে যখন মাইক্রোটি আটকে যায় তখন তিনি ব্রেক করার চেষ্টা করেন। কিন্তু হঠাৎ ব্রেক কষলে ট্রেনের প্রায় ৮/৯শ’ যাত্রীর মৃত্যু হতে পারে। কারণ যে কোন স্টপেজে ট্রেনের যাত্রা বিরতি করতে হলে কমপক্ষে পূর্ববর্তী স্টেশনের আউটার সিগন্যাল থেকে ইঞ্জিন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করতে হয়। কমপক্ষে ৫ কি.মি. আগ থেকে ট্রেন থামানোর প্রস্তুতি নিতে হয় লোকোমাস্টার বা চালককে।

রেলের তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে অভিযোগ রয়েছে আদি অন্ত থেকে। কারণ বাহিরের কোন ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট রেল কর্মকর্তা বা কর্মচাররি বিরুদ্ধে যাওয়ার কোন নজির নেই। তবে রেলের ভেতরের ঘটনায়ও অপরাধীর পক্ষে তদন্ত রিপোর্ট চলে যায় অলৌকিক ভাবে। গত কয়েক বছর আগে খোদ চট্টগ্রাম স্টেশনে ইঞ্জিনের বাফার দুমড়ে মুচড়ে প্ল্যাটফর্মে ইঞ্জিন উঠে যাওয়ার ঘটনায়ও কোন চালকের শাস্তি হয়নি। এটাতো বাহিরের ঘটনা। তাও আবার বেরিয়ার দেওয়ার পর অবৈধ পারাপার। এ ঘটনায় তদন্ত রিপোর্ট রেলেরকর্মচারী বা গেটম্যানের পক্ষে যাবে। এটা অনেকটা অতীতের তদন্তের আলোকে একটা অন্ধকার রিপোর্ট হবে মাত্র— এমনটাই অভিমত সচেতনদের।

আরও পড়ুন