৪ নভেম্বর ২০২৫

‘টানেলের কথা মনে উঠলে মহিউদ্দিন চৌধুরীর কথা খুব মনে পড়ে’

বাংলাধারা প্রতিবেদক »

কর্ণফুলী টানেল প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র চট্টলবীর এ বি এম মহিউদ্দীন চৌধুরীকে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,  ‘চট্টগ্রাম কর্ণফুলী নদীর নিচে টানেল। এ টানেলের কথা মনে উঠলে অবশ্যই আমাদের সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর কথা খুব মনে পড়ে। কারণ তিনি সবসময় একটা টানেল নির্মাণ হউক; সেটা তিনি চেয়েছিলেন। তার একটা দাবিও ছিল। কিন্তু আজকে সেই টানেল উদ্বোধনের পথে। দুর্ভাগ্য হচ্ছে তিনি আজ আমাদের মাঝে নেই। তিনি যেখানেই থাকুক নিশ্চয় সেখান থেকে দেখবেন।’

রবিবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড মাঠে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন তিনি।

চট্টগ্রামের মানুষকে নৌকায় ভোট দেয়ার প্রতিশ্রুতি করিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আপনার কাছে একটি প্রতিশ্রুতি চাই যে আপনি অতীতের মতো আগামী নির্বাচনেও নৌকায় ভোট দেবেন এবং আমাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন। হাত তুলে বলুন, আপনি নৌকায় ভোট দেবেন।’ এসময় উপস্থিত জনগণ দুই হাত তুলে তাঁদের সম্মতি জানায়।

চট্টগ্রামের মানুষকে নৌকায় ভোট দেয়ার প্রতিশ্রুতি করালেন প্রধানমন্ত্রী

খুনি ও যুদ্ধাপরাধীদের রোষানল থেকে দেশ ও জনগণকে বাঁচাতে তাঁর দলের নির্বাচনী প্রতীক নৌকায় ভোট চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আপনাদের দোয়া, সহযোগিতা ও ভোট চাই। কারণ, যাতে যুদ্ধাপরাধী ও খুনিরা আবার ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে।’

তিনি বলেন, ‘যাওয়ার আগে আমি আপনার কাছে একটি প্রতিশ্রুতি চাই যে আপনি অতীতের মতো আগামী নির্বাচনেও নৌকায় ভোট দেবেন এবং আমাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন। হাত তুলে বলুন, আপনি নৌকায় ভোট দেবেন।’

যুদ্ধাপরাধী, খুনি ও জাতির পিতার খুনিদের পৃষ্ঠপোষক রাজনৈতিক দল জামায়াত-বিএনপি বাংলাদেশের মাটিতে  যেন আবার ক্ষমতায় আসতে না পারে সেজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকারও আহ্বান জানান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাবা, মা, ভাই সব হারিয়ে ফিরে এসেছি বাংলার মানুষের কাছে এই জন্য যে, এই দেশের মানুষ দুবেলা পেট ভরে ভাত খাবে, তাদের বাসস্থান হবে, চিকিৎসা হবে, শিক্ষা হবে, উন্নত জীবন পাবে। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনকারী দেশ, সেই বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে, আমরা যেন সেইভাবে বাংলাদেশকে গড়তে পারি।’

অনরা ক্যান আছন, বেয়াগ্গুন গম আছন নি: প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে উল্লেখ করার পাশাপাশি ১৫ আগাস্টে যারা শহীদ হন তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া চেয়ে জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আর সেই সাথে আপনাদের সহযোগিতা চাই, এই বাংলার মাটিতে আবার যেন ওই যুদ্ধাপরাধী, খুনির দল ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে তার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’

তিনি বলেন, এই বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর ছিনিমিনি খেলতে আমরা দেব না। কারণ ওই জামাত-বিএনপি খুনির দল, যুদ্ধাপরাধীর দল, জাতির পিতার হত্যাকারীদের মদদ দানকারীর দল। এমনকি আমাকেও তো বারবার হত্যার চেষ্টা করেছে। কাজেই, এরা যেন বাংলাদেশের মানুষের রক্ত চুষে খেতে না পারে আর যেন তারা এদেশে আসতে না পারে।’

৯৬-তে ভোট চুরি করে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসেছিল: প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশের ৬৩ জেলার ৫০০ জায়গায় বিএনপি বোমা হামলা করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা উন্নয়ন করি। মানুষের কল্যাণ দেখি। আর বিএনপি মানুষ খুন করে, মিথ্যা কথা বলে আর মানুষকে বিভ্রান্ত করে।এটাই হচ্ছে তাদের কাজ। এই কাজই তারা করে। তারা গ্রেনেড মারতে পারে, বোমা মারতে পারে। এই চট্টগ্রামেও তাই বারবার তারা গুলি চালিয়েছে, গ্রেনেড মেরেছে। এমনকি লালদিঘী ময়দানে পরপর দুবার মিটিং করতে গিয়েছি, সেখানেও তারা গুলি চালিয়েছে। শুধু এখানেই না, সারা বাংলাদেশ জুড়ে সমস্ত বাংলাদেশে ৬৩ টা জেলায় ৫০০ জায়গায় বোমা হামলা করেছে এই বিএনপি।’

জঙীবাদ, সন্ত্রাস—এগুলি তারা সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের মানুষকে শান্তিতে থাকতে দেয়নায়। তারা মানুষের শান্তি চায় না। ক্ষমতায় থেকে কি করেছে? দুহাতে লুটপাট। জনগণের অর্থ পচার করেছে। নিজেরা অর্থসম্পদের মালিক হয়েছে।

আওয়ামী লীগ দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য কাজ করে। আওয়ামী লীগ এ দেশের স্বাধীনতা এনেছে। আওয়ামী লীগ এ দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে।’

তিনি বলেন, ‘যখন থেকে আমরা ক্ষমতায় এসেছি এই চট্টগ্রামে আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর আমরা করেছি। ঢাকা-চট্টগ্রাম ৪ লেইন আওয়ামী লীগ সরকার করে দিয়েছে। এটাকে আমরা এখন ৬ লেইনে উন্নীত করবো। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার আমরা রাস্তা নির্মাণ করে দিয়েছি। সাথে সাথে রেললাইন আমরা নির্মাণ করে দিচ্ছি এবং কক্সবাজারেও আমরা আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর নির্মাণ করে দিচ্ছি।’

জিয়ার ভাঙা স্যুটকেস কি জাদুর বাক্স হয়ে গিয়েছিল—প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই চট্টগ্রামে মেডিকেল কলেজ, ৪টি বিশ্ববিদ্যালয়, মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি, মেরিন একাডেমী—এমন কোন প্রতিষ্ঠান নাই আমরা তৈরি করে দিইনায়। প্রত্যেকটা কলেজ প্রত্যেকটা উপজেলায় সরকারি কলেজ, সরকারি স্কুল আমরা করে দিয়েছি। কেন দিয়েছি? আমাদের ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া শিখবে। মানুষের মত মানুষ হবে। তারা ওই বিএনপি-জামায়াতের মতো খুনি হবেনা, দুর্নীতিবাজ হবে না, লুটেরা হবে না। সত্যিকার অর্থে দেশপ্রেমী নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে।’

এর আগে ভাটিয়ারিতে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ শেষে তিনি হেলিকপ্টারে করে এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে নামেন। সেখান থেকে সিআরবি হয়ে পলোগ্রাউন্ড মাঠে আসেন। মাঠে এসেই ২৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন এবং চার প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী।

বেলা ১২টা থেকেই চট্টগ্রামের স্থানীয় এমপি ও কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেওয়ার মাধ্যমে শুরু হয় জনসভার আনুষ্ঠানিকতা। বক্তব্যে নেতারা চট্টগ্রামের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর নেওয়া নানা প্রকল্পের বিবরণ তুলে ধরছেন। আগামীতেও প্রধানমন্ত্রীর মনোনীত নৌকার প্রার্থীদের ভোট দিয়ে জয়ী করার আহ্বান জানান।

এদিন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুপুরের জনসভায় যোগ দিতে সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা পলোগ্রাউন্ডমুখী জনস্রোতে যুক্ত হয়েছেন। ভোরের আলো ফুটতেই চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা রং বেরংয়ের টি শার্ট ও বাদ্যযন্ত্র নিয়ে জনসভাস্থলের আশাপাশে এসে অবস্থান নিতে থাকেন। এরপর সিআরবি, পুরোনো রেলস্টেশন, টাইগারপাস দিয়ে বানের স্রোতের মত নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে প্রবেশ করছেন। এসময় স্লোগানে-স্লোগানে মুখর জনসভাস্থল ও চট্টগ্রামের রাজপথ।

আরও পড়ুন