ksrm-ads

১৯ এপ্রিল ২০২৫

ksrm-ads

বিজয়ের ছুটিতে লোকারণ্য সৈকত, ভীড় জমছে বঙ্গবন্ধুর বালি ভাস্কর্যে

সায়ীদ আলমগীর  »

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আতংককে পাশকাটিয়ে ৪৯তম বিজয় দিবসের ছুটিতে পর্যটকে সরগরম হয়ে উঠেছে কক্সবাজার সৈকত ও আশপাশ এলাকা। সম্প্রতি দূর্গাপুজা ও প্রতি সপ্তাহিক ছুটিতে বালিয়াড়ি লোকারণ্য হয়ে উঠলে শীতের অগ্রহায়নের শেষের দিকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশংকায় কক্সবাজারে পর্যটক আসা কমেছিল। কিন্তু বিজয় দিবসের ছুটিকে উপলক্ষ্য করে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে পূর্ণ হয়ে গেছে সৈকত তীরের হোটেল-মোটেল-কটেজ ও গেস্ট হাউজগুলো।

বিজয় দিবসের প্রথম প্রহর থেকে বালিয়াড়িতে লোকসমাগম বাড়তে থাকে। এদিন বালিয়াড়িতে বঙ্গবন্ধুর বালি ভাস্কর্য উদ্বোধন হলে সেখানে ভীড় বাড়ে দর্শনাথীদের। এতে লোকারণ্য হয়ে উঠে পুরো সৈকত তীর।

বেড়াতে আসা পর্যটকদের সাচ্ছন্দ্য সেবা দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। আর নিরাপত্তা নিশ্চিতে সার্বক্ষণিক কাজ করছে ট্যুরিস্ট ও জেলা পুলিশ এবং জেলা প্রশাসন।

কলাতলীর হোয়াইট অর্কিড হোটেলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) রিয়াদ ইফতেখার জানান, করোনাকালীন স্তব্দ পর্যটন এলাকা গত ১৭ আগস্ট খুলে দেয়ার পর প্রায় প্রতিদিনই ভ্রমণ পিপাসুরা কক্সবাজার ছুটে এসেছেন। নানা দিবস ও সরকারি ছুটিতে টানা বুকিংও হয়েছে। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ভয়ে গত পক্ষকাল ধরে পর্যটক আসা কমে যায়। কিন্তু বিজয় দিবসের ছুটিকে কেন্দ্র করে আজও (১৬ ডিসেম্বর) পর্যটকে ভরে গেছে কক্সবাজার। মঙ্গবার সন্ধ্যা থেকে পর্যটক আগমন শুরু হয়। অনেকে এসেছেন পারিবারিক সদস্যদের নিয়ে। আগামী শুক্র-শনিবার পর্যন্ত থাকতে আগাম বুকিং দিয়ে রেখেছেন অনেক পর্যটক। পর্যটকের উল্লাসে কক্সবাজার মুখরিত হলে ব্যবসায়ীরা স্বস্তিপান।

পর্যটকসেবী দিগন্ত ট্যুরিজমের মালিক ইয়ার মুহাম্মদ জানান, আগত পর্যটকরা সমুদ্র সৈকতের পাশাপাশি দরিয়ানগর, হিমছড়ি ঝর্ণা, ইনানীর পাথুরে সৈকত, রামু বৌদ্ধ বিহার, মহেশখালী আদিনাথ মন্দিরসহ জেলার পর্যটন স্পটগুলোতেও ঢুঁ মারছেন। যাচ্ছেন সেন্টমার্টিনও। আগামী শনিবার পর্যন্ত সেন্টমার্টিনগামী চারটি জাহাজের টিকেট অগ্রিম বিক্রি করা হয়ে আছে।

সী-সেইফ লাইফগার্ড সুপারভাইজার মুহাম্মদ ওসমান বলেন, একদিকে বিজয় দিবসের ছুটি অন্যদিকে বালিয়াড়িতে তৈরী হয়েছে বঙ্গবন্ধুর বিশালাকার বালি ভাস্কর্য। তা দেখতে পর্যটকদের পাশাপাশি সৈকতে ভীড় বাড়িয়েছে স্থানীয় নানা বয়সী মানুষ। তবে, সিংহভাগ ভ্রমণকারিই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। আবার অনেকে বিচে নামার সময় মুখে দিয়ে আসা সার্জিক্যাল মাস্ক বালিয়াড়িতে ফেলে চলে যাচ্ছে। পর্যটকের ভীড় বাড়ায় করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি মানতে প্রতিনিয়ত মাইকিং করা হচ্ছে।

কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউস মালিক সমিতির তথ্যানুযায়ী, কক্সবাজারের প্রায় সাড়ে ৪ শতাধিক হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও কটেজে রয়েছে, যেখানে লক্ষাধিক পর্যটক অবস্থান করতে পারেন। সপ্তাহিক ছুটিতেও প্রায় লাখো পর্যটক কক্সবাজারে অবস্থান করছেন। শতভাগ বুকিংয়ে জমজমাট ব্যবসা করছে তারকা হোটেলগুলো।

কক্সবাজার সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটি সূত্র জানায়, পর্যটকদের সেবা নিশ্চিতে সর্তক অবস্থায় দায়িত্বপালন করছে ট্যুরিস্ট ও জেলা পুলিশ। মোতায়েন রাখা হয় অতিরিক্ত পুলিশও। পর্যটক হয়রানি রোধে পর্যটন স্পটগুলোকে সিসিটিভি ক্যামরার আওতায় আনা হয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে দ্রæত সাধারণ চিকিৎসা ও খাবার পানির ব্যবস্থা রয়েছে সমুদ্র সৈকতে। গোসল করাকালীন বিপদাপন্ন পর্যটকদের রক্ষার্থে সর্তক অবস্থায় রয়েছেন লাইফগার্ড কর্মীরা।

ফেনীর দাগনভ’য়া থেকে আসা পর্যটক ইব্রাহিম কবির জানান, করোনা পরিস্থিতির পর দীর্ঘদিন কোথাও যাওয়া হয়নি। বাড়ির সবাইকে নিয়ে প্রায় ৮ মাস পর বিজয় দিবসকে উপলক্ষ্য করে কক্সবাজার এসেছি। সৈকতে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যটি বাড়তি আনন্দ দিচ্ছে। পরিবারসহ খুবই মজা করছি।

জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মোরাদ ইসলাম জানান, পর্যটক হয়রানি বন্ধে হোটেল-মোটেল ও রেস্তোরাঁয় মূল্য তালিকা টানানোর নির্দেশনা পালন হচ্ছে কিনা তদারকি চলছে নিয়মিত। সৈকতের লাবনী, সুগন্ধা, কলাতলীসহ ১১টি পয়েন্টে স্থাপন করা হয়েছে তথ্য কেন্দ্র (ইনবক্স)। করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি মানতে সর্বদা সচেতনতা মূলক মাইকিং ও প্রয়োজনে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় সবসময় সর্তকাবস্থায় রয়েছে পুলিশ। পর্যটকদের অনাকাঙ্খিত হয়রানির শিকার রোধে, পোষাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোষাকে এবং পর্যটক বেশে পুরুষ-মহিলা পুলিশের সংখ্যাও সৈকতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, পর্যটক নিরাপত্তায় সৈকত এলাকায় পোশাকধারী পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের বিশেষ রেসকিউ টিম, ইভটিজিং কন্ট্রোল টিম, ড্রিংকিং জোন, দ্রুত চিকিৎসাসহ নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে পর্যটকদের নিরাপত্তায়। সৈকতে বীচ বাইক নিয়ে টহল অব্যাহত রেখেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। রয়েছে ৩টি বেসরকারি লাইফ গার্ড সংস্থার অর্ধশতাধিক প্রশিক্ষিত লাইফগার্ড কর্মী। কন্ট্রোল রুম, পর্যবেক্ষণ টাওয়ারসহ পুরো সৈকতে পুলিশের নজরদারির আওতায় রয়েছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, করোনার দ্বিতীয় ফ্লো-র শংকার মাঝেও বিপুল পরিমাণ পর্যটক কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনা রোধের পাশাপাশি পর্যটনটাও এগিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টা চলছে। সেভাবেই পর্যটন সংশ্লিদের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত দেয়া রয়েছে। পর্যটক হয়রানি বন্ধে মাঠে রয়েছে জেলা প্রশাসনের নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত। সবাই আন্তরিক হলে পর্যটন ব্যবসা ঠিক রেখে করোনা রোধ সম্ভব হবে বলে উল্লেখ করেন জেলা প্রশাসক।

বাংলাধারা/এফএস/এআর

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ